সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্কের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০৭ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯
ঢাকা: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে সরকারের অনুকূলে ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমির বরাদ্দ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে বেজাকে এ বরাদ্দ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
একইসঙ্গে আদালত কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সোনাদিয়া দ্বীপের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় গাছ কাটা এবং চিংড়ি ঘের নির্মাণ বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার ও ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমির যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করে প্রতিবেদন আকারে এবং একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তৈরি করে তা ছয় মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।
জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ও ২৭১২ একর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি এসব এলাকা এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সই হওয়া ইজারা চুক্তি ও ৪৯১৬ হেক্টর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ধ্বংস, বাণিজ্যিক ও বন বিরুদ্ধ ব্যবহার থেকে রক্ষার ব্যর্থতাকে কেন সংবিধানের পরিপন্থী, আইনবহির্ভূত, আইনগতভাবে কর্তৃত্বহীন ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল পরিবেশগত তাৎপর্য বিবেচনায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাধীন সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেখানে প্রাকৃতিক বন ও গাছ কাটা; উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসকারী সকল কার্যক্রম এবং ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩ মে অপর একটি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ২১২১.৯৬ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার আওতা বহির্ভুত করা হলে বেলা তা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি সচিব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার জেলার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, মহেশখালী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মহেশখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং মহেশখালী অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৬ জুলাই সোনাদিয়া দ্বীপের ৪৯১৬ হেক্টর এলাকায় ইজারা বা দ্বীপ ধ্বংসকারী সকল কার্যক্রমের অনুমোদন স্থগিত করেন। যা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ রাখেন আদালত। আদালতের এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও সোনাদিয়া দ্বীপের ৯৪৬৬.৯৩ একর জমি (সোনাদিয়া মৌজার ৩১৯১.৭০ একর এবং ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৪৮১০ একর) যার মধ্যে ২৭১২ একর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং ৮০০১.৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার কর্তৃক বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) ইজারা দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম