Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যাম্প থেকে পালিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ করছে রোহিঙ্গারা: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫২ | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

গত জুলাইয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে একটি ছোট নৌকায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে ঢুকে পড়েন রোহিঙ্গা রফিক। ২০১৭ সালে যখন রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল দেশটির সেনাবাহিনী, ওই সময় তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সাত বছর পর সে রফিকই আবার প্রশিক্ষণ নিয়ে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন রাখাইনে। কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধ করে একপর্যায়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হলে রফিক আবার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

কেবল রফিক নয়, তার মতো আরও তিন থেকে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা বিদ্রোহী কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো থেকে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ করছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন বলছে, এসব রোহিঙ্গাদের একটি অংশ যেমন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষে যুদ্ধ করছে, তেমনি একটি অংশ আবার সামরিক বাহিনীর পক্ষেও যুদ্ধ করছে। তারা এর আগে এসব ক্যাম্পে থেকেই সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৮ জনের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছ রয়টার্স। মিয়ানমারের এই সংঘর্ষ সম্পর্কে খোঁজ রাখেন— এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে। দুটি দাতা সংস্থার এ বিষয়ক প্রতিবেদনও দেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। তারা অস্ত্র ধরেছেন রাখাইনের একটি বড় অংশ দখলে নেওয়া বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। রয়টার্সের দাবি, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তার সমর্থনও রয়েছে।

৩২ বছর বয়সী রফিক রয়টার্সকে বলেন, আমাদের জমি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে। আর কোনো উপায় নেই।

বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী’ বলা হয় রোহিঙ্গাদের। ইসলাম ধর্মাবলম্বী এই জনগোষ্ঠী ২০১৭ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেন। জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের চার বছর পর ২০২১ সালে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। এর পর থেকে মিয়ানমারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে৷ রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও এখন যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ করেছে৷

আরাকান জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি সামরিক বাহনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এরই মধ্যে পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মির যোদ্ধারাও রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র যোদ্ধারা আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও আরাকান আর্মি আসার আগে সেনাবাহিনীই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালাত।

শরণার্থী শিবির থেকে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের মিয়ানমারে প্রবেশের ব্যাপারে আগেই গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ হয়েছে। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বেশ কিছু নতুন তথ্য উঠে এসেছে।

বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, এরই মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছেন তিন থেকে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সমঝোতা আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের অর্থ ও নাগরিকত্বের কাগজপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহে বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা যোদ্ধা, মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বা শুধুমাত্র তাদের প্রথম নাম ব্যবহার করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। অন্যদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কোনো ‘মুসলিমদের’ নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষার জন্য অনুরোধ করেছিল। তাই তাদের নিজেদের গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষায় সহায়তা করতে প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেছেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে দুটি বড় রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

কিন্তু একটি নিরাপত্তা সূত্রের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা শিবিরে এবং এর আশপাশে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা যোদ্ধা এবং অস্ত্রের উত্থানকে একটি টাইম বোমা বলে বিবেচনা করে বাংলাদেশ। সহিংসতাপ্রবণ শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নেয়।

শাহাব এনাম খান মনে করেন, শরণার্থীদের দারিদ্র্য কাজে লাগিয়ে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ এবং অন্যান্য় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও ঠেলে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটি তখন অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।’

মংডুর জন্য লড়াই

বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে নৌকায় চড়ে শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি এলাকা থেকে পশ্চিম মিয়ানমারের মংডু শহরে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীই তার থাকার ব্যবস্থা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

সমুদ্র তীরবর্তী শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করছে সেনাবাহিনী। সেখানে অনেকক্ষেত্রে জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে একই ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয় রোহিঙ্গাদের।

আফনা বলেন, ‘যখন আমি জান্তার সঙ্গে থাকতাম, আমি অনুভব করতাম যে আমি সেই একই লোকদের পাশে দাঁড়িয়েছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’

তবে মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জাতি আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। রাখাইনদের অনেকে রোহিঙ্গাদের নির্মূলে সেনাবাহিনীকেও সমর্থন দিয়েছিল।

এ বছর রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট বসতিগুলোর একটি পুড়িয়ে দেয় আরাকান আর্মি। এরপরই আরএসও ও সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরকে সহায়তা করার সমঝোতায় পৌঁছায়।

আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’

তার তথ্যমতে, সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও নগদ অর্থ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রত্যয়নের কার্ডও দিয়েছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের জন্য এটি একটি বড় প্রলোভন। মিয়ানমারে বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশেও রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়, বাইরে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে তাদের কোনো সুযোগ নেই।

আবু আফনা অবশ্য বলেছেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা (নাগরিকত্ব) কার্ড আর জাতীয়তা চেয়েছিলাম।’

এদিকে গত জুনে রয়টার্স দাতা সংস্থার একটি ব্রিফিং হাতে পায়। ওই ব্রিফিং অনুযায়ী, ‘মতাদর্শ, জাতীয়তাবাদ ও আর্থিক প্রলোভনের সঙ্গে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি ও জবরদস্তির মাধ্যমে’ প্রায় দুই হাজার মানুষকে শরণার্থী শিবির থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। দাতা সংস্থাটির নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এই ব্রিফিং দেখতে দেওয়া হয়।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং দুইজন রোহিঙ্গা যোদ্ধার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের জন্য অনেককে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩ বছরের কম বয়সি শিশুও রয়েছে।

অর্থ সংকটে থাকা বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা বাড়ছে। এই ইস্যুটির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার একমাত্র উপায়। তার মতে, কর্মকর্তারা আরও মনে করেন যে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করলে ঢাকা আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।

শরণার্থী শিবির পরিদর্শ করা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঞ্জুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন করা। তার মতে, এর ফলে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং আরাকান আর্মির ওপর বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য চাপ তৈরি হবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন সহজতর হবে।

মঞ্জুর কাদের জানান, পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকারের (আওয়ামী লীগ সরকার) শাসনামলে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু সামগ্রিক নির্দেশনা না থাকায় তা সমন্বিত উপায়ে হয়নি।

আবু আফনা জানিয়েছেন, এ বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মংডুর পথে যাওয়ার জন্য একটি জেটিতে নিয়ে গিয়ে নৌকায় তুলে দেন। আবু আফনার দাবি, তিনি ওই দলের অংশ ছিলেন। একজন কর্মকর্তা তাদেরকে বলেছিলেন, ‘এটি আপনার দেশ, আপনারা যান এবং সেটাকে পুনরুদ্ধার করুন।’

রয়টার্স আবু আফনার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

ভয়ের মধ্যে বসবাস

রাখাইন রাজ্যে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত এবং অপেক্ষাকৃত প্রশিক্ষিত আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তবে মংডুর যুদ্ধ ছয় মাস ধরে চলছে এবং রোহিঙ্গা যোদ্ধারা বলেছেন যে অ্যামবুশসহ নানা ধরনের কৌশল অবলম্বনের ফলে বিদ্রোহীদের (আরাকান আর্মি) আক্রমণের গতিকে ধীর করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

সবশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে অবগত এর বাংলাদেশি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল খুব শিগগিরই তারা একটি সুস্পষ্ট বিজয় লাভ করবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে মংডুতে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে।’

এ বছরের শুরুর দিকে রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাংলাদেশ আলোচনার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঞ্জুর কাদের এবং বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য একজনের মতে, এই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়।

দুজনই বলছেন, রোহিঙ্গা বসতিতে হামলার আরাকান আর্মির কৌশল দেখে ঢাকা ক্রমবর্ধমানভাবে হতাশ হয়েছে। তাদের মতে, এই সহিংসতার ফলে রাখাইনে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা বসতিতে আক্রমণের কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে তারা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য করছে।

অন্যদিকে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে আরএসও এবং আরসা প্রভাব বিস্তারের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। সংঘাতের ফলে সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, মানবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলছেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ বছর সহিংসতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পোঁছেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ বছর অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে। ফোর্টিফাইয়ের আসন্ন একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিপক্ষকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং হুমকি ও হয়রানির মাধ্যমে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাকক্যান্স সতর্ক করে দিয়েছেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পের জন্য আসা আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। শরণার্থীদের জীবিকার সুযোগ না দিলে অনেকে, বিশেষ করে তরুণরা, জীবিকার সুযোগ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠিত দলে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

মে মাসে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে আসা শরিয়ত উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়মিত রেশনের জন্য লড়াইয়ের বর্ণনা দিয়েছেন রয়টার্সকে।

মিয়ানমারে তিনি ধান ও চিংড়ি চাষ করতেন। সংঘাতের মধ্যে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে এখন উদ্বেগ কাজ করছে তার মধ্যে। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছুই নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে বাস করি।’

সারাবাংলা/টিআর

মায়ানমার রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর