আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযোগ: কী প্রভাব পড়বে ভারতের অর্থনীতি-রাজনীতিতে
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২৪ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৭
বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে প্রতারণা ও ঘুষ সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ফেডারেল প্রসিকিউটরদের দাবি, আদানি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার ব্যবসার জন্য অর্থ সংগ্রহের সময় ২৫ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছেন এবং ২০ বছর ধরে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ২০০ কোটি ডলারের বেশি ঘুষ দিয়ে চুক্তি আদায় করেছেন।
অভিযোগের প্রভাব
আদানি গোষ্ঠী বর্তমানে ১৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য পরিচালনা করে। তাদের ব্যবসার মধ্যে পোর্ট, বিমানবন্দর, সিমেন্ট, নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন, গ্যাস পাইপলাইন, এবং গ্রিন হাইড্রোজেন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তার পুরো ব্যবসায়িক কাঠামো এবং উচ্চাভিলাষী আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযোগ শুধু আদানি গোষ্ঠী নয়, ভারতীয় অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারণ, আদানি গোষ্ঠী ভারতের অবকাঠামো এবং জ্বালানি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো একদিনেই ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বাজার মূল্য হারিয়েছে। তাদের শেয়ারের সম্মিলিত বাজার মূলধন ১৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। পাশাপাশি, অভিযোগের মুখে আদানি গ্রিন এনার্জি ৬০ কোটি ডলারের বন্ড অফার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।
ভারতের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
গৌতম আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভারতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী আদানির গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এবং এই ইস্যুতে সংসদে তীব্র বিতর্কের হুমকি দিয়েছেন। রাহুল গান্ধী আগেও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা করেছেন।
সমালোচকরা বলছেন, মোদী ও আদানির সম্পর্ক স্বজনতোষী পুঁজিপতি (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম)-এর একটি উদাহরণ। অর্থাৎ, রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করা। তবে এই অভিযোগ সত্ত্বেও আদানি তার সাম্রাজ্য বাড়িয়ে চলেছেন।
মার্কিন-ভারত বাণিজ্যের ওপর প্রভাব
বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, আদানির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মার্কিন-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে তিনি আরও বলেন, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক এতটাই গভীর যে এই অভিযোগ সেই সম্পর্ককে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।
গৌতম আদানি ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আদানি গ্রুপ দেশের ১৩টি প্রধান বন্দর, ৭টি বিমানবন্দর, এবং বৃহত্তম সিমেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করে। এছাড়া, তার বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই অভিযোগগুলোর ফলে আদানি গোষ্ঠীর নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে। তবে তারা বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আদানি গোষ্ঠীকে সমর্থন করতে থাকবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে বাধা
আদানি গোষ্ঠী ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় কয়লা খনি পরিচালনা, কেনিয়া ও মরক্কোতে বিমানবন্দর এবং তানজানিয়ায় অবকাঠামো প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন অভিযোগের কারণে এই আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
আগামীর চ্যালেঞ্জ
আদানি গোষ্ঠী অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে এবং আইনি প্রতিরক্ষা জোরদার করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযোগ আদানি গোষ্ঠীর জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হলেও এটি তাদের জন্য চরম বিপর্যয়ের কারণ হবে না।
তবে মার্কিন অভিযোগ আদানি ও তার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নতুন প্রশ্ন তুলেছে এবং ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই পরিস্থিতি কতটা জটিল হয় এবং আদানি গোষ্ঠী এটি কীভাবে সামাল দেয়।
সারাবাংলা/এনজে