গণ নির্বাসনে পরিবার হারাবে লাখ লাখ শিশু
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৫৫ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:০২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসী বিরোধী নীতি নিয়ে নানান পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ সীমান্তে ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে অনেক শিশুই তাদের পরিবার হারাবে কারণ অভিবাসীদের প্রায় ২০ কোটি শিশুই মার্কিন বংশোদ্ভূত সন্তান।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) দ্বিতীয় মেয়াদে এই গণ নির্বাসনের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে নির্বাসনের সম্মুখীন একজন অভিভাবক যদি তার পরিবারকে একত্রে রাখতে পছন্দ করেন, তাহলে একজন অভিবাসীর সন্তানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে অন্যত্র বসতি স্থাপন করতে হবে। একটি অপরিচিত দেশে যেখান থেকে তাদের বাবা-মা নিরাপত্তার কারণে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
এই নীতির কারণে অন্তত ৫ হাজার বিদেশী শিশু এবং কয়েকশ মার্কিন নাগরিক শিশু তাদের বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে।
অভিবাসী এবং শিশু কল্যাণের আইনজীবীরা এই নীতিকে লাখ লাখ অভিবাসী শিশুদের জন্য একটি আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইয়ং সেন্টার ফর ইমিগ্র্যান্ট চিলড্রেনস রাইটসের কারিগরি সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক কেলি অ্যালবিনাক ক্রিবস বলেন, ‘এই লাখ লাখ মার্কিন নাগরিক শিশু এখানে জন্মগ্রহণ করেছে, আপনাদের স্কুলে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে এবং আপনার লিটল লিগ বেসবল দলে খেলেছে, এরা এদের বাবা-মাকে হারিয়ে সত্যিকারের বিপদের সম্মুখীন হবে।’
ক্রিবস বলেন, ‘জানুয়ারিতে এসে আমেরিকানদের পারিবারিক বিচ্ছেদের মতো কঠোর পদক্ষেপে ফিরে আসতে হবে। ট্রাম্প এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন যার স্পষ্ট উদ্দেশ্য অভিবাসীদের মার্কিন বংশোদ্ভূত শিশুদের নাগরিকত্ব নষ্ট করা।’
অন্যদিকে,সেন্টার ফর ল অ্যান্ড সোশ্যাল পলিসির অভিবাসন এবং অভিবাসী পরিবারগুলোর পরিচালক ওয়েন্ডি সারভান্তেস বলেছেন জানান, ‘ট্রাম্পের অধীনে অভিবাসী শিশুদের নিয়ে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ পরিকল্পিত।’
২০১৯ সালে সারভান্তেস সেন্ট্রাল মিসিসিপির শহরগুলো পরিদর্শন করেছিলেন যেখানে আইস এজেন্টরা প্রায় ৭০০ অনথিভুক্ত পোল্ট্রি প্ল্যান্ট কর্মীকে গ্রেফতার করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই সেখানকার পাবলিক স্কুলে পড়তেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশু ছিল।
সারভান্তেস বলেন, ‘বাচ্চারা হাতকড়া পরে স্কুল ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের বাবা-মাকে দেখছিল সাদা ভ্যান থেকে যা খুবই মর্মান্তিক। ওই শিশুগুলোর এখন অবধি অনেক মানসিক সহায়তা প্রয়োজন।’
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বিভাগের অধ্যাপক নান্দো সিগোনা বলেন, ‘এই ধরনের অপারেশন বন্ধ করতে মার্কিন সংস্থা এবং বিদেশী সরকার উভয়ের মধ্যেই উচ্চ মাত্রার সমন্বয় প্রয়োজন। মেক্সিকোর মতো একটি দেশ কয়েকশ লোককে গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু কয়েক হাজার লোককে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথা বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের অভিবাসন নীতির সিনিয়র ডিরেক্টর দেবু গান্ধীর মতে, ‘কর্মীদের নির্বাসন মুদ্রাস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে, খাদ্য সরবরাহকে সংকুচিত করবে। এটি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণের একটি ধীর প্রচেষ্টা এবং করদাতাদের ডলার অপব্যয় করার প্রচেষ্টা।’
ইয়ং সেন্টারের ক্রিবস বলেন, ‘আমরা এই আগামী চার বছর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এই চলার পথটি অনেক হৃদয়বিদারক হতে চলেছে।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, চারজন মার্কিন শিশুর মধ্যে অন্তত একজনের বাবা কিংবা মা অভিবাসী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী ৪০ কোটিরও বেশি মার্কিন শিশু একজন নথিভুক্ত অভিবাসী অভিভাবকের সঙ্গে বসবাস করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ অবৈধভাবে বসবাস করছেন। ট্রাম্প যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো শুরু করেন, তাহলে তা সরাসরি প্রায় ২ কোটি পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ