হলের আধিপত্য নিয়ে পলিটেকনিকে শিবির-ছাত্রদল সংঘর্ষ
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৭ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এসময় ইনস্টিটিউট ভবনের দরজা-জানালাও ভাংচুর করা হয়।
শিবির অভিযোগ করেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী ও বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রদল নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। অন্যদিকে ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, প্রশাসনকে জিম্মি করে ছাত্রশিবির হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর খুলশী এলাকায় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) ফয়সাল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পলিটেকনিকের হল খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরোধ হয়েছে। এখানে কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থলে আছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। এখন মোটামুটি শান্ত আছে। ৫-৭ জনের মতো সামান্য আহত আছে।’
জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও সূর্যসেন ছাত্রাবাস দুটি খুলে দেয়া হয়। বুধবার ছাত্রাবাসে কক্ষ বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রদের হলে নেয়া শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো শুরুর পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তবে প্রশাসন তাদের প্রতিবাদে কর্ণপাত করেনি বলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন সেখানে যান। তাদের উপস্থিতিতে সেখানে হামলা, পাল্টা হামলা ও একপর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
ইনস্টিটিউটের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ বহিরাগত কিছু লোক ঢুকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। আমরা প্রাণভয়ে তিনতলায় আশ্রয় নিই। তারা নিচ থেকে আমাদের লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়ে মারে। এসময় তারা বলতে থাকে, আমি না কি শিবির। অথচ আমি শিবির করি না। আমি একজন সাধারণ ছাত্র। আমাকে কেন শিবির বলে ইট ছুঁড়ে মারা হল, আমি এটার বিচার চাই।’
ইনস্টিটিউটের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা ছিল। ইমরান, আকাশ, মহানগরের সেক্রেটারি তুহিনও ছিল। এরা এসে আমাদের দেখিয়ে বলে, এরা কেউ ছাত্র না, এরা সবাই শিবির, এদের পেটাও। আমাদের দিকে ইট ছুঁড়ে মারতে থাকে। আমরা নিরাপত্তার শঙ্কায় মেইন গেটে তালা লাগিয়ে দিই। তারা গেট ভাঙার চেষ্টা করে। বারবার উসকানি দিয়ে আমাদের তাদের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত করার চেষ্টা করে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে ছাত্রশিবির প্রশাসনকে জিম্মি করে হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও হলে সিট বরাদ্দের আবেদন করতে পারেনি। শিবিরের ছেলেরাই সেখানে উঠে গেছে। চট্টগ্রাম কলেজেও তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করি। আমাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। তখন শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে হামলা করে।’
চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাকির হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্মমভাবে হামলা করেছে ছাত্রলীগের প্রেতাত্মা তথাকথিত ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাদের বয়স ৩০-৪০ বছরের কাছাকাছি। তারা ছাত্র সেজে টোকাই ও পরিতত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। প্রায় ১৫ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এসআর