জি২০ ঘোষণা নিয়ে হতাশা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ শঙ্কায়
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৪ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৫
জি২০ সম্মেলনের প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে রাশিয়া সম্পর্কে অবস্থান তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নরম। সাতটি অনুচ্ছেদের মাত্র একটি অনুচ্ছেদে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যুদ্ধের কুফল, মানুষের দুর্দশা নিয়ে সাধারণ সামাজিক দৃষ্টিকোণে বক্তব্য রয়েছে, কিন্তু ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিন্দুমাত্র সমালোচনা করা হয়নি ঘোষণাপত্রে।
বুধবার (২১ নভেম্বর) ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জি২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
গত বছর নয়াদিল্লির ভারতমণ্ডপমে জি২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ঘোষণাপত্রে ৭টি অনুচ্ছেদ ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণাপত্রে বলেছিল, ‘এই সময় যুদ্ধের সময় নয়’। মস্কোকে সঙ্গে নিয়ে সে ঘোষণাপত্রের জন্য আয়োজক দেশ হিসেবে সেই সময়ে বিশ্বের বড় অংশের প্রশংসা কুড়িয়েছিল মোদি সরকার। তবে এবার তার সেই অবস্থান থেকেও সরে এসেছে।
রিও ঘোষণাপত্রে যা আলোচনা করা হলো
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত বছরে দিল্লি সম্মেলনেই আলোচনা করা হয়েছিল। বলা হয়েছে, ‘নয়াদিল্লিতে গত বছরে মানবিক দুর্দশা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তার সূত্র ধরে বলা যাচ্ছে যে, বিষয়টির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তায়।’
আরও বলা হয়েছে, ‘সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে ভাল, বন্ধুত্বপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশিসুলভ সম্পর্ক তৈরির জন্য জাতিসংঘের সনদে নির্দিষ্ট নীতিগুলোকে তুলে ধরতে এবং স্থায়ী, সামগ্রিক, ন্যায্য শান্তির পরিবেশ গড়তে সাহায্যকারী সমস্ত গঠনমূলক আলোচনা ও পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’
সম্মেলনের আগেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি চুক্তিতে সই করে নতুন ভাবে পরমাণু আক্রমণের হুমকি দিয়েছেন, যার প্রথম লক্ষ্য ইউক্রেন। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছে, পরমাণু শক্তিধর নয় এমন রাষ্ট্র যদি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সাহায্য পায়, তা হলে আত্মরক্ষার্থে তার উপরেও পারমাণবিক আক্রমণ চালাতে পারবে মস্কো। এমন মারাত্মক একটি চুক্তি নিয়েও একটি শব্দ নেই রিও বিবৃতিতে। তবে পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়া সম্পর্কে এই নরম নীতি নেওয়ার বিরোধীতা করেছিল বৈঠকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিবৃতির ভাষা নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় এই বিবৃতিতেই তারা সন্তুষ্ট থেকেছে। তবে এর বাইরে ব্রিটেন জার্মানি, কানাডার মত অনেক দেশের নেতাই অভিযোগ তুলেছেন বিবৃতির বিরুদ্ধে।
ইউক্রেনকে সামরিক এবং নৈতিক সমর্থন দিয়ে আমেরিকার যে ডেমোক্র্যাট সরকার এত দিন পাশে ছিল, তারা ক্ষমতা থেকে সরে যাবে কয়েক সপ্তাহ পরেই। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথাব্যথা নেই ইউক্রেনের জন্য, বরং তিনি রাশিয়াকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে বিনিময়ে বড় কোনও সমঝোতা করতে বেশি আগ্রহী।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নিচ্ছে
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সবুজ সংকেত পাওয়ার দু’দিন পরই রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইউক্রেন।
আরও পড়ুন-
এর পর থেকেই ইউক্রেনে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন এটি হবে ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণ’।
বুধবার (২০ নভেম্বর) ইউক্রেনকে অ্যান্টি-পারসনেল বা মনুষ্যবিহীন মাইন সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
একই দিনে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার বিমানপ্রতিরক্ষা ইউনিট ও নৌবাহিনীর অংশ হিসেবে কুরস্কে অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার ৯০০ উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একজন আইনপ্রণেতা।
২০ নভেম্বর আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চালু করার একদিন পর ইউক্রেন প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
অন্যদিকে রাশিয়া পাল্টা আক্রমণে পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। ফলে ইউক্রেনে যে কোনো সময়ই হামলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভজুড়ে দেখা দিয়েছে থমথমে পরিবেশ।
রাশিয়ার সম্ভাব্য বিমান হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি ও গ্রিসও ঘোষণা করেছে কিয়েভে তাদের দূতাবাস বন্ধ থাকবে।
সারাবাংলা/এইচআই