Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ বছরের প্রকল্পে ৯ বছর পার, আরও একবার বাড়তি সময় চায় রেলওয়ে

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৮ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ০৩:০৭

সারা দেশের এমন সব রেল ক্রসিংকে নিরাপদ করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল দুই বার। তাকে কাজ হয়নি। পরে প্রকল্প সংশোধন করতে হয়েছে। তার জন্য ব্যয় বেড়েছে, বেড়েছে মেয়াদও। এভাবে একে একে তিনবার প্রকল্প সংশোধন করায় মেয়াদও বেড়েছে তিনবার। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়েছে পাঁচবার। তাতে দুই বছরের প্রকল্প গিয়ে ঠেকেছে ৯ বছরে। এতেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। শেষ পর্যন্ত আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন প্রকল্পে দেখা দিয়েছে এ চিত্র। রেলওয়ে বলছে, এ পর্যায়ে কেবল গেটকিপারদের চাকরি রাজস্ব খাতে নিতে প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মাত্র দুই বছরের একটি প্রকল্প ৯ বছরেও শেষ করতে না পেরে আবারও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশন বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশ্য প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে কমিশন সম্মতি জানিয়েছে। তবে এটিও স্পষ্টভাবে রেলওয়েকে বলে দেওয়া হয়েছে, এটিই শেষবার, এরপর এ প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানোর সুযোগ নেই।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর এ প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীতে এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয় ১৫ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটির দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ জানান পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা কমপক্ষে ১৩ শ। বাকি ক্রসিংগুলোতেও নেই স্থায়ী গেটম্যান বা গেটকিপার। এদিকে রেলওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, সারা দেশে গড়ে প্রতি বছর রেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রায় চার শ। এর বড় একটি অংশই অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার শিকার। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এসব দুর্ঘটনা রোধে স্থায়ী কর্মীর মাধ্যমে রেল ক্রসিংকে সুরক্ষিত করতেই এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় রেল ক্রসিংয়ের মান উন্নয়নের প্রকল্পটি হাতে নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় না বাড়িয়েও দুই দফায় মোট তিন বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতে প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার সুযোগ পায়।

তবে দুই বছরের প্রকল্পকে টেনে পাঁচ বছরে নিয়ে লাভ হয়নি। সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্যয় না বাড়িয়ে আরও একবার মেয়াদ বাড়ানো হয় প্রকল্পটির। দুই বছর বেড়ে এটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। পরে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের একটি সংশোধনী অনুমোদন পায় একনেকে। এবারে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। এবারে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক শেখ নাইমুল হক বলেন, ভৌত কাজ শতভাগ শেষ হলেও প্রকল্পের আওতায় নির্মিত লেভেল ক্রসিং গেটের জন্য অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত গেটকিপারদের পদ স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শেষ করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত ৭৬৬ জন গেটকিপারের চাকরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতার সংস্থান রেখে প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য এই সংশোধন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পিইসি সভা সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সোলেমান খান এ পর্যায়ে গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জানতে চান। এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুপম আনোয়ার বলেন, গত ৪ নভেম্বর এ পদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিধিমালায় কিছু সংশোধনী আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়কে। এটি বর্তমানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, গেটকিপারদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার জন্য আরও কিছু ধাপ রয়েছে। সেগুলো শেষ করতে আর এক বছরের মতো সময় প্রয়োজন হবে।

কেবল গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ী করার জন্য একটি প্রকল্পের একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানোসহ সংশোধন প্রস্তাব করায় সভাপতি সোলেমান খান উষ্মা প্রকাশ করেন। এটি সমীচীন নয় বলেও তিনি অভিমত জানান।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবির আহামদ বলেন, জননিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ এসব গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়টি এর মধ্যেই নিস্পত্তি হওয়া উচিত ছিল। তবে এবার বিশেষ বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ ও জনবল খাতের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ শেষবারের মতো বাড়ানোর সুপারিশ করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে আর কোনো অবস্থাতেই এ প্রকল্পের মেয়াদ সম্প্রসারণ করা সমীচীন হবে না।

পরে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির মতামত জানতে চান সোলেমান খান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও প্রকল্পটি সংশোধনের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরে সোলেমান খান বলেন, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিং ও গেটগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য কর্মরত জনবলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাদের বেতন-ভাতাও যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশ রেলওয়ে রেল ক্রসিং রেল গেটকিপার রেলওয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় লেভেল ক্রসিং