ভাঙছে নবগঙ্গা, আতঙ্কে তীরের মানুষ
২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৯ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৮
নড়াইল: নবগঙ্গা নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছেন কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি, কাঁচাপাকা ঘর, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়াও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কালিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসত বাড়ি, বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এতে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত পদক্ষেপে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
কালিয়া উপজেলার নদীপাড়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের হাজারো বাসিন্দার কাছে নদী ভাঙন চিরচেনা বিষয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তারা তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েক সপ্তাহের তীব্র ভাঙনে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা।
সরেজমিনে জানা যায়, কয়েক সপ্তাহ ধরে কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকায় শুরু হয়েছে নবগঙ্গা নদীর তীব্র ভাঙন। নদীগর্ভে চলে গেছে ঘরবাড়ি, গাছপাড়াসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, মানুষের বসতভিটা, কবরস্থান, মসজিদ, পাকা রাস্থাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই সড়কটি নদী গর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, ভেসে যাবে শত শত মাছের ঘের।
কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা আলেক শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর সব নদীতে চলে গেছে। মাথা গোঁজার মতো এই বাড়িটাই শুধু ছিল, তাও চলে গেল। এখন ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি।’
একই গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ মুক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কে দিন পার করছি। এই রাস্তা যদি ভেঙে যায় তাহলে আমাদের বাড়িসহ বাকি সব বাড়ি নদীতে চলে যাবে। সেইসঙ্গে এলাকার সব পুকুর ঘেরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নদী ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে সর্বশান্ত ফুলি বিবি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। এখন আমি কোথায় থাকব, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। এই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমিও নেই যে, সেখানে একটু মাথা গুঁজবো। এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব। আকাশের নিচে ছাড়া আমার থাকার কোনো জায়গা নাই।’
আঙিনার সবজি ক্ষেত ও বসতবাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পথে আশ্রয় নেওয়া হাসি বেগম। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমার আার কিছুই নেই, সব নদীতে চলে চলে গেছে। রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই। রাতে ঘুম নেই, ঠিকমতো খাবার নেই।’
ক্ষতিগ্রস্তএলাকায় ভাঙন রোধে অতীতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের প্রাথমিক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এবার ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন নদীপাড়ের বসতীরা।
এদিকে, নদী ভাঙনের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনী দিকনির্দেশনা দেন।
নদী ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জরুরিভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
সারাবাংলা/পিটিএম