বেহাল শৌচাগার, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কুবি শিক্ষার্থীরা
১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০১ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১০:০৮
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) একাডেমিক ভবন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে বেশ কয়েকটি শৌচাগার থাকলেও পরিষ্কার করা হয় না দীর্ঘ দিন। এতে শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় জনতা ব্যাংকসংলগ্ন শৌচাগারও পরিত্যক্ত আকার ধারণ করেছে।
শুধু তাই নয়, জরাজীর্ণ চিত্র প্রশাসনিক ভবনের ৪১১ নম্বর কক্ষের পাশের শৌচাগারগুলোরও। প্রধান ফটকের ভেতরে নির্মিত শৌচাগারও রীতিমতো লাল বর্ণ ধারণ করেছে, যার আশপাশে গেলেও গন্ধে টেকা দায়। অনেক সময় বাধ্য হয়েই এসব শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলয়ে কুবি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ক্যাম্পাসে শৌচাগারের পরিমাণ অপ্রতুল। যেগুলো আছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে সেগুলোর অবস্থাও দিন দিন শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, নাক-মুখ চেপে বাথরুমে যেতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘ সময় ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় নিরুপায় হয়েই তারা এসব অপরিচ্ছন্ন-অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন।
কুবির চারটি একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবন ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে করুণ দশা নিচতলার বাথরুমগুলোর। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলার ১০৮ নম্বর কক্ষসংলগ্ন বাথরুমের সামনে দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যারিকেড দেওয়া। কোথাও পানির ট্যাপ আছে, আবার কোথাও নেই। সপ্তাহের পর সপ্তাহ বেশির ভাগ শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে। কোনো কোনো শৌচাগার শেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই।
এসব ভবনের একটি শৌচাগারেও সাবান-টিস্যুর ব্যবস্থা নেই। উলটো অনেক শৌচাগারের মেঝেতেই জমে রয়েছে পানি। কোনোটিতে বেসিন ভাঙা, নেই আয়না-কল। শৌচাগার জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে টিস্যু, ছেঁড়া কাগজ, ইটের টুকরাসহ নানা ধরনের আবর্জনা। আবার কিছু শৌচাগারে বদনা বা হ্যান্ড শাওয়ারের কোনো বালাই নেই। আলো জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ বাথরুমেই। মশার উপদ্রবও অনেক।
বিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলার পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের শৌচাগারগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এ ভবনের পশ্চিম পাশের কনফারেন্স রুমসংলগ্ন শৌচাগারগুলোতে কেউ একবার ভুল করে গেলেও দ্বিতীয়বার যাওয়ার সাহস করবে না, এতটাই জরাজীর্ণ অবস্থা!
ভবনগুলো ঘুরে আরও দেখা গেছে, বেশির ভাগ অনুষদের বেসিনগুলো স্যাঁতস্যাঁতে, নেই ট্যাপ-আয়না। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ তলার শৌচাগারগুলো কিছুটা ব্যবহারযোগ্য। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ ও আইন অনুষদের শৌচাগারগুলো দেখতে অনেকটা ভালো ও ব্যবহার উপযোগী। এ ভবনগুলোতে নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ তুলনামূলকভাবে কম।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেরিয়ার নিচ তলায় দুটি শৌচাগার থাকলেও কোনোটিই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে নারী শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায় কিছু শৌচাগার থাকলেও সেগুলো বিভিন্ন সংগঠনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া। ফলে বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারছেন না। একটি শৌচাগার খোলা থাকলেও তার অবস্থা নাজেহাল। অনেক সময় সেখানে গিয়েও শৌচাগারের বেহাল দশা দেখে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আছমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একাডেমিক কাজে বেশির ভাগ সময় আমাদের ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হয়। ফলে অনেক সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ওয়াশরুমগুলোর করুণ অবস্থা। বাধ্য না হয়ে কেউ যায় না। সবসময় অপরিষ্কার থাকে, দরজা লাগানো যায় না। ফলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে কি না, এ আতঙ্কে থাকতে হয়।’
আছমা আর বলেন, ‘মাঝে মাঝে পানিও থাকে না। বেসিনের আয়না ভাঙা, বেসিনে পানি আসে না। ময়লা ফেলার কোনো ঝুড়িও নেই। অনেক সময় গন্ধে ওয়াশরুমের পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না।’
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ইমন বলেন, ‘বিজ্ঞান অনুষদে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, পরিসংখ্যান ও ফার্মেসি— পাঁচটি বিভাগ। এগুলোর ওয়াশরুমের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। প্রায় সব বিভাগের ওয়াশরুমের বেসিনই অকেজো। বেসিনে পর্যাপ্ত পানি আসে না। অনেক দরজা মেরামত করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ সময় ওয়াশরুমগুলো অপরিষ্কার থাকে, যা ব্যবহার করার উপযোগী থাকে না।’
জানতে চাইলে কুবির ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘ওয়াশরুম-বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। বিভাগগুলো সচেতন থাকলে ওয়াশরুম অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার কথা নয়। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি প্রশাসন অবশ্যই ভালোভাবে দেখবে বলে আমি আশা করি।’
কুবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘অবশ্যই বিভাগগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খেয়াল রাখা দরকার। তবে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবেও পদক্ষেপ নেব।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর/টিআর