Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে সাবেক মন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা, বিষ্ণোই গ্যাংয়ের দিকে আঙুল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৫৯ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৩

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা বাবা সিদ্দিককে (৬৬) গুলি করে হত্যা করেছে আততায়ীরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা নিজেদের মুম্বাইয়ের লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে দাবি করেছেন। তবে গ্যাংয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। সেখানে গাড়ি ওঠার সময় তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মৃত্যু হয় বাবা সিদ্দিকের।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, কমপক্ষে ছয়টি গুলি চালানো হয় বাবা সিদ্দিককে লক্ষ্য করে। চারটি গুলি তার বুকে লাগে। পুলিশ একে চুক্তিভিত্তিক হত্যা হিসেবে সন্দেহ করছে এবং তদন্তের জন্য চারটি বিশেষ দল গঠন করেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গুজরাট ও দিল্লির পুলিশও মামলাটি তদন্ত করছে।

মুম্বাই পুলিশ বলছে, বাবা সিদ্দিককে গুলির ঘটনায় জড়িত তিনজন। তাদের মধ্যে দুজনকে আটক করা সম্ভব হলেও একজন পালিয়ে গেছেন। কী কারণে সাবেক এই মন্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।

ক্রাইম ব্রাঞ্চ সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুজন দাবি করেছেন, তারা প্রায় এক মাস ধরে গুলি করার স্থান রেকি করছিলেন। তিন অভিযুক্ত শনিবার রাতে একটি অটোরিকশায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর গুলি চালান।

বিজ্ঞাপন

মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপির প্রধান অজিত পাওয়ার এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘এ ঘটনায় আমি হতবাক। একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারালাম। আমরা এমন এক নেতাকে হারালাম, যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। এ হামলা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে।’

মুম্বাই পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেন, ‘অভিযুক্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের একজন উত্তর প্রদেশের, আরেকজন হরিয়ানার বাসিন্দা। আরও একজন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

বাবা সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনি এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এনসিপির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফুল প্যাটেল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’ এনসিপির (এসপি) নেতা শারদ পাওয়ার বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্রে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা উদ্বেগজনক।’

কংগ্রেস ত্যাগী বিজেপি নেতা অশোক চ্যাভান বলেন, ‘এ মৃত্যুর খবরটি আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পুরোনো দলে (কংগ্রেস) থাকার সময় আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি।’ কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথালা বলেন, ‘যুব কংগ্রেস করার সময় থেকেই আমরা বন্ধু। এ ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত।’

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন জানিয়েছে, রাজনীতির বাইরে সিদ্দিকের বলিউডের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া জমকালো পার্টিতে অনেক তারকাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তার পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমান খানের মধ্যে। দুই খানকে দুপাশে নিয়ে তোলা তার ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।

পুলিশ এ ঘটনা দুই দিক থেকে তদন্ত করছে— একটি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, অন্যটি একটি বস্তি পুনর্বাসন মামলার সাথে জড়িত। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করা হচ্ছে কারণ বাবা সিদ্দিকি বলিউড তারকা সালমান খানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সালমান এর আগে লরেন্স বিষ্ণোইর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন। সিদ্দিকির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি ১৫ দিন আগে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন এবং তাকে ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। তবে সিদ্দিকি বিষ্ণোই গ্যাং থেকে কোনো হুমকি পাওয়ার কথা পুলিশকে জানাননি বলে জানা গেছে।

চিহ্নিত দাগি আসামি লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দি। তবে তার গ্যাং প্রায়ই ব্যবসায়ীদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। সালমান খান ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার শিকার মামলার কারণে তার তালিকায় রয়েছেন সালমান খান। এর আগে বিষ্ণোইর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রোহিত গোদারা বলেছিলেন, সালমান খানের যেকোনো বন্ধু তাদের শত্রু। পুলিশ জানিয়েছে, বিষ্ণোই গ্যাংয়ে ৭০০-এরও বেশি সদস্য রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অনেক অপরাধী তার হয়ে কাজ করে।

সারাবাংলা/টিআর

গুলি করে হত্যা বাবা সিদ্দিক

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর