Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গু: চট্টগ্রামে ৬ এলাকা ‘লাল’ তালিকায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৫২ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪০

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। সারাবাংলা ফাইল ছবি

ৎচট্টগ্রাম ব্যুরো: সেপ্টেম্বর পার করে অক্টোবরে এসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অক্টোবরের এক সপ্তাহে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা তিন শ ছাড়িয়ে গেছে। এক মাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের হিসাবে চট্টগ্রাম নগরীর ছয়টি এলাকাকে ছয়টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামি, বন্দর, পাহাড়তলী ও খুলশী— এই ছয় এলাকা ‘লাল’ তালিকাভুক্ত করেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

বিজ্ঞাপন

১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের ওপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ‘চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ঠিকানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ শিরোনামে প্রকাশিত তালিকায় নগরীতে মোট ২৩টি এলাকায় ৫১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তালিকায় লাল তালিকাভুক্ত ছয়টি এলাকার মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে কোতোয়ালিতে ১০৬ জন, বাকলিয়ায় ১০৩ জন, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় ৭৬ জন, বন্দরে ৩৩ জন, পাহাড়তলীতে ৩২ জন ও খুলশী এলাকায় ২৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

হলুদ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে পাঁচটি এলাকাকে। এর মধ্যে পাঁচলাইশে ১৯ জন, হালিশহরে ১৮ জন, পতেঙ্গায় ১৫ জন, চান্দগাঁওয়ে ১১ জন ও ডবলমুরিং এলাকায় ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

নীল তালিকাভুক্ত সাতটি এলাকার মধ্যে লালখান বাজারে ৯ জন, আগ্রাবাদে সাতজন, মুরাদপুরে ছয়জন, আকবর শাহ এলাকায় পাঁচজন, কাট্টলীতে পাঁচজন, নাসিরাবাদে চারজন ও দামপাড়ায় চারজন শনাক্ত হয়েছে।

এ ছাড়া সবুজ তালিকাভুক্ত চারটি এলাকার মধ্যে অক্সিজেন এলাকায় তিনজন এবং সিটি গেট, চৌমুহনী ও সদরঘাট এলাকায় দুজন করে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য আমরা যেসব এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি, সেগুলোকে রেড জোন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি। সেই তালিকা আমরা সিটি করপোরেশনে দিয়ে এলাকাগুলোতে মশা নিধনে বিশেষ নজর দিতে বলেছি। পাশাপাশি জনসাধারণকেও যেন সতর্ক করা হয়।’

‘এ ছাড়া কীটতত্ত্ববিদ দিয়েও আমরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জরিপ (সার্ভে) করেছি। দেখা গেছে, রেড জোনগুলোতে মশার ঘনত্ব বেশি। শহরের বাইরে লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারা থেকে বেশি রোগী আসছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে,’— বলেন ডা. জাহাঙ্গীর।

চট্টগ্রামে সেপ্টেম্বর মাসে এসে ব্যাপকভাবে চোখ রাঙাতে শুরু করে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু। সেপ্টেম্বরে আগের আট মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে শনাক্তের পরিমাণ অন্তত চার গুণ বেশি।

সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের হিসাব বিবেচনা করে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল সিটি করপোরেশন। এলাকাগুলো হলো— কোতোয়ালি, বাকলিয়া ও বায়েজিদ বোস্তামি। সর্বশেষ সিভিল সার্জনের লাল তালিকা অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তালিকায়ও সেগুলোর নাম এসেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে মোট ৯০৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মহানগরে ৫৮৫ জন ও উপজেলায় ৩২২ জন। মৃত্যু হয় ১১ জনের। এর মধ্যে ১০ জনই নারী, চারজন পুরুষ এবং দুজন শিশু।

চট্টগ্রামে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলতি বছরে মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৮৬৭ জন। এর মধ্যে নগরীতে ১১৫৩ জন ও জেলায় ৭১৪ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন, জুলাইয়ে ১৯৮ জন, আগস্টে ২০২ জন ও সেপ্টেম্বরে ৯০৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। অক্টোবরের সাত দিনে শনাক্ত হয়েছে ৩৬২ জন।

জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে লোহাগাড়ায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী মিলছে। এ বছরে লোহাগাড়ায় শনাক্তের সংখ্যা ১৭৯ জন।

চলতি বছরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। এর মধ্যে জানুয়ারিতে দুজন এবং মার্চ, জুলাই ও আগস্টে একজন করে মারা গেছেন। এর বাইরে কেবল সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ১১ জন।

২০২৩ সালেও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৭ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮২ জন।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। ‍মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। আর ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মারা যান পাঁচজন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ডেঙ্গু ডেঙ্গুর ঝুঁকি মশার ঘনত্ব রেড জোন সিভিল সার্জন কার্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর