শয্যাগত রওশন এরশাদ, অর্থ সংকটে ব্যাহত চিকিৎসা
৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:১০ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:১২
ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। সে হিসাবে সাবেক ফার্স্ট লেডি। ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। এরশাদের প্রতিষ্ঠা করা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। ৮৪ বছর বয়সে এসে শারীরিকভাবে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। বার্ধক্য, শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত তিনি।
স্বজনরা বলছে, অসুস্থতার কারণে রীতিমতো শয্যাগত রওশন এরশাদ। স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। তাকে যোগাযোগ করতে হচ্ছে ইশারা-ইঙ্গিতে। এদিকে শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে তাকে দেশের বাইরেও চিকিৎসার জন্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় পার্টি বর্তমানে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ায় দল থেকেও কোনো সাড়া নেই তার বিষয়ে।
রওশন এরশাদের অনুসারী জাতীয় পার্টির একজন কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, রওশন এরশাদ দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। শরীরের ওজনও আশঙ্কাজনক হারে কম। বছরখানেক আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার সময় তার ওজন ছিল ৫০ কেজি। কমতে কমতে এখন তা ৪৫ কেজিতে নেমে এসেছে।
গত কয়েক মাস ধরেই রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা অবনতিশীল। স্বজনরা বলছেন, সার্বক্ষণিক বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে তাকে। ওই অবস্থাতেই নামাজ পড়েন তিনি। মাঝে মাঝে কোরআন খুলে পাঠ করেন। আপাতত ছেলে সাদ এরশাদের স্ত্রী মাহিমা সাদ ও একজন সেবিকা দেখাশোনা করছেন শয্যাগত রওশন এরশাদের।
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতেন জাপার শীর্ষ নেতারা। এমনকি জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার দেবর জি এম কাদেরও প্রায় প্রতিদিনই গিয়ে দেখা করতেন, কথা বলতেন নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনের পর থেকেই আর দলের কোনো নেতার উপস্থিতি দেখা যায়নি রওশন এরশাদের বাসভবনে। কেবল জাপা রওশন এরশাদ অংশের নেতা কাজী মামুনুর রশিদ ও সাবেক ছাত্র নেতা জহির তার খোঁজখবর রাখেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতিনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদ আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তারা বলছেন, দলের কোনো পর্যায় থেকেই কোনো সহায়তা বা সমর্থন মিলছে না। মায়মনসিংহে রওশন এরশাদের যে পৈতৃক ভিটা, তার আয় দিয়েই আপাতত তার চিকিৎসার খরচ চলছে।
এসব বিষয় নিয়ে রওশন এরশাদের অনুসারী জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামকে এর আগে থাইল্যান্ডে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। আবার তাকে থাইল্যান্ড নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে উড়োজাহাজে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আর্থিক সংকটও রয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি ভালো নেই।’
রওশন এরশাদের অসুস্থতা দীর্ঘ দিনের। ২০২১ সালের শেষার্ধে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এর মধ্যে ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে ১৪ আগস্ট তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। ওই সময় তাকে কয়েকদিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) রাখতে হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। পরে আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২০ অক্টোবর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
সিএমএইচে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাতেও খুব বেশি উন্নতি না হওয়ায় রওশন এরশাদকে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। ওই সময় রওশন এরশাদ ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। তিনি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। ওই অধিবেশনে যোগ দিতে প্রায় আট মাস পর ২০২২ সালের ২৭ জুন ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন তিনি।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ওই সময় গুলশানের বাসায় ওঠেননি রওশন এরশাদ। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি গুলশানের একটি হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার চিকিৎসা করানো হয়। ৪ জুলাই পর্যন্ত তিনি হোটেলে থাকার সময় তার চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক থেকে চিকিৎসক ও নার্সও নিয়ে আসা হয়। অধিবেশন শেষে ৫ জুলাই তিনি ফের ব্যাংককে যান। দেশে ফেরেন ২৬ নভেম্বর।
এরপর থেকে রওশন এরশাদ দেশেই ছিলেন। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ব্যাংককে গেছেন তিনি। সবশেষ গত বছরের ১০ জুলাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ব্যাংকক যান তিনি। দেশে ফেরেন ৮ আগস্ট।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর/এমপি