১২২ কনটেইনার মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫৬ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানির পর নির্ধারিত সময়ে খালাস না করা ১২২ কনটেইনার মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব পণ্যের মধ্যে বিপদজনক রাসায়নিকও রয়েছে। নানা জটিলতায় পণ্যগুলো ধ্বংস করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, পণ্য ধ্বংস করার মতো নিজস্ব জায়গা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বাজেট না থাকায় এসব পচনশীল, নিলাম অযোগ্য ও বিপদজনক পণ্যগুলোকে ধ্বংস করা যাচ্ছে না। যখনই নিলাম অযোগ্য পণ্য নষ্ট করতে হয় তখনই সেগুলো ধ্বংস করার জন্য জায়গা খুঁজতে হয় কাস্টমস হাউজকে। আবার পণ্য ধ্বংসের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও সহজে পাওয়া যায় না।
দেড় বছর আগে উচ্চ তাপমাত্রায় বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্র ইনসিনেরেটর স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে চিঠি লিখেছিল কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনো সে বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, কোনো আমদানিকারক ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস না করলে ১৫ দিনের নোটিশে সেগুলো নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নিলামেও অনেক পণ্য অবিক্রিত থেকে যায়। আবার অনেক পণ্যই নিলামেই তোলার মতো অবস্থায় থাকে না। সেসব পণ্য শেষ পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই সেগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন সংকটের কারণে কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষকে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।
সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বরে অর্থাৎ প্রায় দুই বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত নগরীর আনন্দবাজার ডাম্পিং ইয়ার্ডে ৭৩ কনটেইনার পচনশীল দ্রব্য ধ্বংস করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ১৫টি লটে এসব পচনশীল খাদ্যপণ্য ধ্বংস করা হয়েছিল। বর্তমানে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ৭২টি পচনশীল পণ্য ও ৫০টি বিপজ্জনক রাসায়নিক বোঝাই কনটেইনার পড়ে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কঠিন পদার্থ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ডাইথোনাইট, সালফক্সিলেট, হাইড্রোক্লোরাইড, স্টিক সোডা, ফার্মাসিউটিক্যালস উপাদান, বেভারেজ কনসেন্ট্রেটসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক।
মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক ধ্বংস করতেও কিছু নিয়ম মানতে হয়। সাধারণত অন্যসব মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য স্কেভেটর দিয়ে বড় গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করা হলেও রাসায়নিকের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ রাসায়নিক পদার্থ মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে ফেলে। তাই পরিবেশ অধিদফতরের পরামর্শ মেনে রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করতে হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানার জিও সাইকেল প্রকল্পে ৪৯ টন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ধ্বংস করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ সারাবাংলাকে জানান, নিজস্ব জায়গা না থাকায় প্রতিবারই কাস্টমসকে পণ্য ধ্বংস করতে জায়গা খুঁজতে হয়। তাছাড়া পণ্য ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই তাদের। তবে সবচেয়ে বেশি সংকট জায়গার। নিজস্ব জায়গা থাকলে পণ্য ধ্বংস করার কাজ কোনো সংশয় ছাড়া করা যেত। রাসায়নিকের মতো বিপদনক জিনিসও বন্দরের ইয়ার্ডে পড়ে আছে। এগুলো নিয়েও সবার দুশ্চিন্তা আছে।
জানতে চাইলে কাস্টমস হাউসের উপ কমিশনার সাইদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পণ্য ধ্বংস করার জন্য আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। এই সংকটের কারণে গত দুই বছর মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস করা যায়নি। কনটেইনার ভর্তি ট্রেলার বা প্রাইম মুভার নিয়ে সিটি করপোরেশন পরিচালিত ডাম্পিং ইয়ার্ডে যাতায়াত করার মত পর্যাপ্ত জায়গা নেই। দুর্ঘটনা ঘটে আরও জটিলতা বাড়বে। জায়গা পেলে আমাদের পণ্য ধ্বংসের কাজ সহজ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চলতি বছরের জুলাইয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যগুলো ধ্বংস করার ব্যাপারে প্রাথমিক আলাপ করেছিলাম। কিন্তু এর পর দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতে আর সেটা নিয়ে চিন্তা বা কথা বলা হয়ে ওঠেনি।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম
১২২ কনটেইনার চট্টগ্রাম কাস্টমস টপ নিউজ বিপাকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য