কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতারের পর নির্যাতন: ১৪ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১৪ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে গ্রেফতারের পর এক কলেজ শিক্ষার্থীকে থানা হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন ওই আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- সিএমপিতে সেসময় কর্মরত দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী, কোতোয়ালি থানার সে সময়কার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক, বাকলিয়া থানার সে সময়কার ওসি আফতাব উদ্দিন, কোতোয়ালি থানার পেট্রোল ইন্সপেক্টর (ট্রাফিক) মো. মিজানুর রহমান, কোতোয়ালি ট্রাফিক জোনের মুন্সি কনস্টেবল শাহজাহান, কোতোয়ালি থানার সেসময়কার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মেহেদী হাসান, রুবেল মজুমদার, রণেশ বড়ুয়া ও গৌতম, একই থানার কনস্টেবল কামাল এবং বাকলিয়া থানার এসআই আবদুস সালাম, মো. মিজান এবং ওসির দেহরক্ষী কনস্টেবল মো. ইলিয়াছ। একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও সাত থেকে আট পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নির্যাতনের শিকার সরকারি সিটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজমুল হোসেনের বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাজমুল হোসেন নগরীর বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু) এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে পুলিশ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে সুস্থ অবস্থায় নাজমুলকে আটক করে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করতে করতে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়।
সেখানে পুলিশ সদস্যরা লোহার স্টিক, বক্সে থাকা স্ট্যাম্প দিয়ে নাজমুলকে বেধড়কভাবে সারা শরীরে ‘শিবির’ বলে পেটাতে থাকে। পরে নাজমুলকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে প্রথমে চান্দগাঁও এবং আধঘণ্টা পর কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তিন জন এসআই ও একজন কনস্টেবল ‘শিবির আনা হয়েছে’ এবং ‘আন্দোলন করো মজা বুঝবে’ বলে উল্লাস করে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে।
পরে থানার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে ‘মজা কী এখনই বুঝবে’ বলে উল্লাস করে নাজমুলের দুই হাত উপরে তুলে দেওয়ালমুখী করে দাঁড় করিয়ে কাঠের স্ট্যাম্প এবং পুলিশের ব্যবহৃত লোহার লাঠি দিয়ে পিঠ, কোমর ও দুই পায়ের উরুতে বেদম মারধর করে। ওই সময় কোতোয়ালি জোনের এসি (সহকারী কমিশনার) অতনু চক্রবর্তী এবং থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে চেক করতে থাকে। ওসি মোবাইল ফোনে কিছু না পেয়ে নাজমুলকে শিবির করে কি না জিজ্ঞাসা করে।
থানায় ক্রমাগত নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আবারও কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়। বিকেলে বাকলিয়া থানা পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়। নাজমুলের বড় ভাই নজরুল খবর পেয়ে বাকলিয়া থানায় যান। রাত ১১টার দিকে নাজমুলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ জুলাই চিকিৎসাধীন নাজমুলকে আট নম্বর আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১৪ দিন কারাগারে থাকার পর আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়।
বাদীর আইনজীবী স্বরুপ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গ্রেফতার করে নাজমুল হোসেনকে থানায় নিয়ে শিবির ট্যাগ দিয়ে অকথ্য নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজুর জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যুনতম পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ভিকটিম, বাদী ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা কেন দেওয়া হবে না তা ১৪ দিনের মধ্যে জানাতে অভিযুক্তদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম