রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে নির্ভুল সংবাদমাধ্যম ‘সারাবাংলা’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:২৩ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৫০
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের সংবাদ প্রকাশে বস্তুনিষ্ঠতার নিরিখে অনলাইন সংবাদমাধ্যম সারাবাংলা ডটনেট নির্ভুল সংবাদমাধ্যমের স্বীকৃতি পেয়েছে। সংবাদ প্রকাশে মিথ্যা সংবাদ, গুজব এড়িয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ‘রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশের’ প্রতিবেদনে মিলল সারাবাংলার এই স্বীকৃতি। এর আগেও রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে সারাবাংলা বরাবরই ভালো অবস্থানে ছিল।
প্রতিবেদনে রিউমার স্ক্যানার জানায়, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে কোনো ভুল সংবাদ প্রচার করেনি সারাবাংলা ডটনেট। নির্ভুল সংবাদপ্রকাশের তালিকায় থাকা সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে সারাবাংলা ছাড়া আরও রয়েছে দ্য ডেইলি স্টার, ডিজিবাংলা, ডয়চে ভেলে বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা, বাংলা ট্রিবিউন, নিউ এজ, বৈশাখী টিভি, জিটিভিসহ মোট ৫৮টি পোর্টাল।
উল্লেখ্য, ফ্যাক্ট চেকিং বা তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ। ২০২১ সালে পয়েন্টার ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজমের অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) প্রতিষ্ঠানকে এই স্বীকৃতি দেয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকগুলোতে গণমাধ্যমের ভুল বিশ্লেষণ এবং আগের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করে এই তথ্য পেয়েছে রিউমার স্ক্যানার। ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্মটি দেশের ১৬৪টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো যাচাই করেছে। সব মিলিয়ে ১৬৪টি সংবাদমাধ্যমে থাকা ৬৮১টি প্রতিবেদন যাচাই করে ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ তারা পেয়েছে। এর মধ্যে সংবাদমাধ্যমগুলোতে সর্বোচ্চ ২০টি থেকে সর্বনিম্ন একটি ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে তারা।
গণমাধ্যমে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭৮টি প্রতিবেদনকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি ভুল তথ্য (২৮ শতাংশ) শনাক্ত হয়েছে মার্চ মাসে। এপ্রিলে শনাক্ত ১৪টি (১৮ শতাংশ)। সবচেয়ে কম ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে ৭টি।
রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশের তথ্য বলছে, ভুল তথ্য সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন ‘কালবেলা’র প্রকাশিত সংবাদে। ভুল তথ্য ছিল শনাক্ত হওয়া ৭৮টি প্রতিবেদনের মধ্যে ২০টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মূলধারার এই সংবাদমাধ্যম। ভুল তথ্যের তালিকায় দ্বিতীয়তে জুম বাংলা, তৃতীয়তে সময় টিভি ও আরটিভি, চতুর্থতে যুগান্তর, ডিবিসি নিউজ, চ্যানেল২৪, ডেইলি বাংলাদেশ ও ঢাকা পোস্ট এবং পঞ্চমে আছে যায়যায়দিন, জনকণ্ঠ ও বিডি২৪রিপোর্ট।
ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, সবচেয়ে বেশি ১৪টি ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে জাতীয় বিষয়ে, শতকরা হিসাবে যা ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩টি আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। খেলাধুলা ও ধর্মীয় বিষয়ে ভুল সংবাদ প্রচারের সংখ্যা ছিল ১১টি, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ ছাড়া পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে নয়টি, রাজনীতি বিষয়ে সাতটি, বিনোদন বিষয়ে ছয়টি, শিক্ষা বিষয়ে তিনটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দুইটি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও প্রতারণা বিষয়ে একটি করে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে।
ধরণভিত্তিক ভুল সংবাদ বিবেচনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমগুলোয় সবচেয়ে বেশি ভুল সংবাদ ছিল তথ্যকেন্দ্রিক (৪১টি), যা মোট ভুলের ৫২ শতাংশ। এছাড়া, প্রকাশিত সংবাদে গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় পুরোনো বা ভিন্ন ঘটনার ভুল ছবি ব্যবহার করেছে ১৯টি, যা শতকরা হিসেবে ২৪ শতাংশ। এর বাইরে ভিডিও কেন্দ্রিক ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে ১৮টি।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৭৮টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ‘টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা’র খবরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৭২) গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য প্রচার করতে দেখা গেছে। একটি খবরে অন্তত ১০টি গণমাধ্যম ভুল সংবাদ দিয়েছে এমন বিষয় পাওয়া গেছে ১৮টি।
এছাড়া চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একক কোনো ঘটনা বিবেচনায় এই নির্বাচন নিয়েই সর্বোচ্চ ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো।
এছাড়া, অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধন ইস্যু, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ ইস্যু এবং রাসেলস ভাইপার ইস্যুতে তিনটি করে ভুল সংবাদ শনাক্ত করা হয়েছে। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ অপহরণ ইস্যুতে গণমাধ্যমে প্রচারিত দুইটি সংবাদকে ভুল হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু ইস্যুতে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করেছে গণমাধ্যম।
জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান চলতি বছর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। খেলোয়াড় পরিচয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেও চলতি বছর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে তার নাম। রিউমার স্ক্যানারের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের গণমাধ্যমের ভুল সংবাদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে সাকিবের বিষয়েই সবচেয়ে বেশি (৩টি) ভুল সংবাদ প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এই তিনটির মধ্যে একটি রাজনীতি কেন্দ্রিক হলেও বাকি দুইটি খেলাধুলা বিষয়ক।
এর বাইরে গণমাধ্যমের সংবাদের মাধ্যমে একটি করে ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন, সংগীতশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় জাহানারা আলম, জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবাল, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব মালিক, ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার কুসাল মেন্ডিস, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার কাকা এবং ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। এছাড়া স্থাপনা হিসেবে সবচেয়ে বেশি (২টি করে) ভুল সংবাদের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল ও ভারতের বাবরি মসজিদ। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিষয়ে একটি ভুল সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস)’ ওয়েবসাইটে প্রথম ছয় মাসে একটি ভুল সংবাদ প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। গত মার্চে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৩০০ টন পেঁয়াজ আমদানি শীর্ষক দাবিতে একটি সংবাদ গণমাধ্যমটি প্রচার করে। পরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সে সময় ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোনও ভুল তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রচারের প্রমাণ মেলেনি।
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা বিদেশি গণমাধ্যম বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দু’টি ভুল সংবাদের প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। জালালউদ্দিন হায়দারের তোলা ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেওয়ার সময়কার একটি ছবিকে সে বছরের ৭ মার্চের ছবি দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। ২০২০ সালে ইরানে একটি বিমান দুর্ঘটনার ছবিকে গত মে মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের বিধ্বস্ত ছবি দাবি করে বিবিসি বাংলা সংবাদ প্রচার করে।
সারাবাংলা/এসবিডিই