গুমের অভিযোগে র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ
২৯ আগস্ট ২০২৪ ২১:২৬ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৪ ০২:০৪
রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিএনপির কর্মীকে ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনকে গুমের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। এতে র্যাব-৫ এর সাত সদস্যকে আসামি করা হয়। আদলত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে গোদাগাড়ীর আমলি আদালতের বিচারক লিটন হোসেন এ আাদেশ দেন। এর আগে, বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার আমলি আদালতে এ মামলার আবেদন করেন ইসমাইলের স্ত্রী নাইস খাতুন (৩০)। তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর মহল্লায়। ইসমাইল নাইস দম্পতির নাবালক দুই সন্তান রয়েছে।
নাইসের অভিযোগ, তার স্বামী জুয়েলারি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে র্যাব। নাইস যাদের আসামি করার আবেদন করেছেন তারা হলেন- র্যাব-৫ এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, ল্যান্স নায়েক মাহিনুর খাতুন, সিপাহী কহিনুর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।
নাইসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান রুমন জানান, বুধবার মামলাটি দাখিল করা হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
নাইস খাতুন জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার স্বামী ইসমাইল হোসেন (৩০) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিফাত জুয়েলারি দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে র্যাব সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যান। তিন দিন পর ইসমাইল অন্য এক ব্যক্তির মোবাইল নম্বর থেকে কল করে পরিবারকে জানান, তিনি র্যাবের হেফাজতে কলোনি ক্যাম্পে আছেন।
নাইস জানান, র্যাব সদস্যরা যখন ইসমাইলকে তুলে নিয়ে যান তখন অনেকেই দেখেছেন। এ ছাড়া মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার দুই ব্যক্তি র্যাব ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় সেখানে ইসমাইল হোসেনকে দেখেছেন। ইসমাইল র্যাব হেফাজতে আছেন জেনে তারা ওই সময় র্যাব-৫ এর তৎকালীন অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেন। কিন্তু তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন।
নাইস জানান, র্যাব ক্যাম্পে থাকা যে দুই ব্যক্তি ইসমাইলকে দেখেন এবং যারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন মামলায় তাদের সাক্ষী করা হয়েছে।
ইসমাইল হোসেনের ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী জানান, তার ভাই বিএনপির কর্মী ছিলেন। তবে কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না। কী কারণে র্যাব তুলে নিয়ে গুম করেছে তাও জানা নেই। অপহরণের কয়েকদিন পর র্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজনের মোবাইল নাম্বার থেকে একাধিকবার কথাও বলেছিলেন ইসমাইল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ঈদের ছুটিতে র্যাবের অফিসাররা বাড়ি চলে গেছেন। ছুটি শেষে তারা ফিরলে তাকে হয়তো আদালতে চালান দিতে পারে। তারপর আর যোগাযোগ হয়নি। র্যাবের পক্ষ থেকেও তার ভাইকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ঢাকায় ডিজিএফআই’র অফিসের সামনে ভাইয়ের খোঁজে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কোনো খোঁজ পাননি। তবে এতদিন র্যাবের ভয়ে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তাই তারা আদালতে এ মামলা করছেন।
সারাবাংলা/পিটিএম