Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকার ও দলীয় প্রধান আলাদা হবেন— টিআইবির সুপারিশ

সারাবাংলা ডেস্ক
২৮ আগস্ট ২০২৪ ২১:৫৫ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪ ০১:৩৯

নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্তভাবে সংসদ ও নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একই ব্যক্তি যেন একই সঙ্গে সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী), দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা থাকতে না পারেন, এমন বিধান প্রণয়নের সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না— এমন বিধান প্রণয়নের সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

এই দুই সুপারিশসহ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল বার্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক ও সুশাসনের ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকাঠামোকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে ৯টি কৌশলগত বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যে ৯ খাতে টিআইবি সুপারিশ করেছে সেগুলো হলো— গণতান্ত্রিক চর্চা; আইনের শাসন ও মানবাধিকার; অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধ; সাংবিধানিক, সংবিধিবদ্ধ, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান; নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা; তথ্য অধিকার ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা; স্থানীয় সরকারব্যবস্থা; ব্যাংক খাত; এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিবেশ।

সুপারিশে বলা হয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্ব, সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও চর্চায় এমন আমূল পরিবর্তন আনতে হবে যেন জনগণের রায় ও অর্পিত ক্ষমতায় এবং জনগণের প্রতি কার্যকর জবাবদিহিতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের ফলে নতুন কর্তৃত্ববাদ ও দলীয় প্রভাবে পরিচালিত শাসনের উত্থানের ঝুঁকি প্রতিহত করতে দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য টিআইবি রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে এসব সুপারিশ করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। জাতীয় সংসদে জনরায়ের বাস্তব প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান যে ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে, সেই রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠনের লক্ষ্য অর্জনসাপেক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।

বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কারের জন্য ৯টি কৌশলগত খাতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি। ছবি: টিআইবি

তিনি বলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ তরুণ প্রতিনিধি থাকতে হবে। পাশাপাশি, নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গণঅনাস্থা প্রকাশের মাধ্যমে অপসারণ এবং ওই সংসদীয় আসন বা স্থানীয় সরকার এলাকায় পুনরায় নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে টিআইবি।

আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিতে মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথক করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে সম্পন্ন করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ ক্ষমতায়িত নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন ও কার্যকর করা, উচ্চ এবং অধস্তন আদালতের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বাধীন সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র ওপর নির্ভর করে জনগণের প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করি এই প্রত্যাশার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই সরকারের পাশাপাশি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকল অংশীজনই ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মূল চেতনা ও বার্তাকে ধারণ করে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করবেন। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে আমরা যতই রাষ্ট্রসংস্কারের কথা বলি না কেন, নতুন বাংলাদেশের কথা বলি না কেন, তা অর্জিত হবে না।

পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা দুদক, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ— এসব সংস্থাকে নিয়ে সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করছি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করা ও বিচারের সম্মুখীন করা অবশ্যই সম্ভব। আমাদের আইনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব, যার রোডম্যাপ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে। এর মাধ্যমে ২০০৭-এ শুরু হওয়া প্রক্রিয়ায় ২০১৩ সালে ক্ষমতাধর ব্যক্তির সিঙ্গাপুরে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়েছিল। এ প্রক্রিয়া এখন আরও মসৃণ ও সহজ হয়েছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িত ব্যক্তিদের তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা) ও প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার জন্য ঢেলে সাজাতে সুপারিশ করেছে টিআইবি। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে দলীয়করণ চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বলেছে। বিদ্যমান দলীয় লেজুড়বৃত্তিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন পেশাসহ সব পেশাজীবী, বিশেষায়িত ও সেবাখাতভিত্তিক সংগঠন ও সমিতি বিলুপ্ত করে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় দলীয় প্রভাবমুক্ত সংগঠন ও সমিতি প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করে টিআইবি।

প্রস্তাবিত সুপারিশমালায় টিআইবি আশু প্রাধান্যের ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে— শান্তি-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করা; নজিরবিহীন প্রাণহানিসহ বহুমাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সরাসরি ও হুকুমের অপরাধে দায়ী সকলকে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা; অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কার্যকর জবাবদিহির অনুকরণীয় উদাহরণ স্থাপনে দুদক, বিএফআইইউ, এনবিআর, সিআইডি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা; এবং ‘নতুন বাংলাদেশে’র অভীষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্র-সংস্কারের অপরিহার্য কাঠামো বিনির্মাণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কৌশলগত পথরেখা প্রকাশ করা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাষ্ট্রকাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে ৯টি কৌশলগত বিষয়ের সন্নিবেশনে তৈরি সুপারিশমালা ২৫ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন। সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

সারাবাংলা/টিআর

অন্তর্বর্তী সরকার টপ নিউজ টিআইবি নতুন বাংলাদেশ সরকারের কাছে সুপারিশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর