সব দাবি পূরণ হবে— ধৈর্য ধরতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
২৫ আগস্ট ২০২৪ ২০:৫৫ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৪ ০১:২৫
ঢাকা: রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সপ্তাহ দুয়েক হলো দায়িত্ব পালন করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, দল, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোকে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের দ্বারস্থ হতে দেখা গেছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের সামনে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারকে এখনই চাপ না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমরা অনুধাবন করছি, আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর, যদিও দীর্ঘ দিনের গণতন্ত্রহীনতা ও ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গেছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমি প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব— আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
- ‘কখন নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়’
- নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ, সবার সহায়তা কামনা প্রধান উপদেষ্টার
- কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত না করতে পারে: ড. ইউনূস
দাবি-দাওয়া পূরণ বা নানা বিষয় নিয়ে চলমান বিভিন্ন প্রবণতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের চাপ তৈরি করা, বিচারের জন্য গ্রেফতার ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই এক ধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা, তা থেকে বের হতে হবে। ছাত্রজনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও ব্যাহত হবে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, রাতারাতি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন। নড়বড়ে এক কাঠামো, আমি বরং বলব জনস্বার্থের বিপরীতমুখী একটি কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সব ক্ষমতার উৎস হয়, বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়। তরুণ প্রজন্ম শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদের হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটি বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখকষ্ট আপনাদের জমা আছে, সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখথ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের কাছে একান্ত অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া, লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল না। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে, আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান, তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
সারাবাংলা/টিআর
জাতির উদ্দেশে ভাষণ টপ নিউজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা