মিয়ানমারে ফিরতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়ে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
২৫ আগস্ট ২০২৪ ২০:১০ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৫৭
কক্সবাজার: মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে, এখনও চলছে গণহত্যা। এসব নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে আশ্রয়রত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা বলেছেন, ‘জন্মগতভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক আমরা। গণহত্যা, জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এটা রিফিউজি জীবন, আমরা মিয়ানমারে দ্রুত ফিরতে চাই।’
শনিবার (২৫ আগস্ট) উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পে ক্যাম্পে আয়োজিত সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলা হয়। এসময় আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে অব্যাহত চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এর আগে, সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে আয়োজন করা হয় সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলের। ২৫ আগস্টকে গণহত্যা দিবস মন্তব্য করে ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শনের পাশাপাশি গণহত্যার বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান ছিল এসব আয়োজনে। সমাবেশে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই ছিলেন সাদা পোষাক পরা। যেসব পোষাকে ছিল নানা দাবিসহ স্লোগান।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩-১৪টি স্থানে পৃথকভাবে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সমাবেশ। সবচেয়ে বেশি বড় জমায়েত হয়েছে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঠে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই সমাবেশ ঘিরে লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নর-নারীর অংশ দেখা গেছে। যেখানে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। যে মোনাজাতে মিয়ানমারের ২০১৭ সালের নির্যাতন নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ বর্ণনা করে কান্নায় ভেঙে পড়েন অংশগ্রহণকারীরা।
সমাবেশে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা বলেছেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। এই দেশে আর কত বছর থাকবো, আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই। মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন সফল করতে দেশটির পাশে থাকতে হবে।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ, রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন, মাস্টার রশিদ আহমদ মাস্টার রহমত উল্লাহসহ অনেকে।
ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গারা দ্রুত কর্মসূচি শেষ করেছে। কর্মসূচিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্তি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসু-দৌজা বলেন, “রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ‘জেনোসাইড ডে’ পালন করেছে। শান্তি পূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। সেখানে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হবার ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন।
এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহ। পরে তিনি মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।
সারাবাংলা/এমও
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কক্সবাজার গণহত্যা টপ নিউজ মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমাবেশ