মুলতানের দুঃখ ভুলিয়ে দিল রাওয়ালপিন্ডি
২৫ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৩৪ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৫৭
ইতিহাস গড়ার জন্য লক্ষ্যটা ছিল মাত্র ৩০ রান। সেই টার্গেট ১০ উইকেট হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেললেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ঐতিহাসিক এই জয়ে উল্লাসে ভাসল পুরো বাংলাদেশ ড্রেসিংরুম। সেই উল্লাস ছড়িয়ে গেল গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশের সমর্থকদের মাঝেও। উল্লাসটা ছড়িয়ে গেছে হাজার মাইল দূরে থাকা বাংলাদেশের কোটি মানুষের মাঝেও। ইতিহাস গড়ার এই উল্লাসে হয়তো ঘুচে গেল মুলতান টেস্টের সেই কান্নাও।
মুলতান টেস্ট, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম কষ্টদায়ক অধ্যায়। ফিরে যাওয়া যাক ২১ বছর আগে। সেপ্টেম্বর ৬, ২০০৩। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। পুরো ম্যাচেই দারুণ খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের দেওয়া ২৬১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খালেদ মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিকদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে কোণঠাসা পাকিস্তান। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইনজামাম-উল-হক। জয় পরাজয়ের মাঝে ব্যবধান ছিলেন শুধুই তিনি।
এই ম্যাচেই পাকিস্তান কিপার রশিদ লতিফের নেওয়ার বাংলাদেশি ব্যাটার অলোক কাপালির সেই বিতর্কিত ক্যাচ নিয়ে তখন আলোচনার ঝড়। বল মাটিতে পড়লেও সেটাকে ক্যাচ হিসেবে উদযাপন করেছিল পাকিস্তান, আম্পায়ারও আউট দিয়েছিলেন কাপালিকে। অন্যদিকে শেষ দিনে পাকিস্তানের একমাত্র ভরসা ইনজামামকে বিতর্কিত রান আউট করার সুযোগ পেয়েও ‘নৈতিকতার’ কারণেই সেটা করেননি রফিক।
সেই ইনজামামই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন। এক উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয়ে উল্লাসে মাতে পাকিস্তান। চোখের পানি মুছতে মুছতেই মাঠ ছাড়েন খালেদ মাহমুদরা। সেই ছবি আজও হয়তো তাড়া করে বেড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেটকে।
এই ছবি এখনো কাঁদায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের
এরপর ২১ বছরে অনেকবারই মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে মোট ১৩ বার মুখোমুখি হলেও একবারও জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। ১২ ম্যাচেই হেরেছে তারা, একটি হয়েছে ড্র। এবারের সিরিজের আগেও বাংলাদেশ অধিনায়ককেও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই রেকর্ড। শান্ত অবশ্য জানিয়েছিলেন, রেকর্ড তো ভাঙ্গার জন্যই!
রাওয়ালপিন্ডিতে ভাঙল সেই ‘রেকর্ড’। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের গড়া বড় স্কোরকে টপকে গিয়ে লিড পায় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংসেই ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ দিনশেষেও হয়তো কেউ ভাবেননি পঞ্চম দিনে এমন কিছু হতে পারে! ম্যাড়ম্যাড়ে ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে ম্যাচ, ধারণা করা হচ্ছিল এমনটাই।
৯ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনে ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব-মিরাজদের ঘূর্ণি জাদুতে মাত্র ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই টেস্টে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোর। বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৩০। এই লক্ষ্য তাড়া করতে ৭ ওভারও নেয়নি বাংলাদেশের দুই ওপেনার।
খালেদ মাহমুদ সুজন এই পাকিস্তানের মাটিতেই ২১ বছর আগে চোখ মুছতে মুছতেই মাঠ ছেড়েছিলেন। আজ সেই পাকিস্তানের মাটিতেই বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় হয়তো তার মনের সেই ব্যথা কিছুটা দূর হয়েছে। দূর হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের সেই পুরনো দুঃখও!
সারাবাংলা/এফএম