সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
২৫ আগস্ট ২০২৪ ১২:৫৭ | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩২
ঢাকা: অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধান সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী এই রিট দায়ের করেন।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে খর্ব করায় উক্ত বিধানের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে রিটে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপড় ন্যস্ত রয়েছে মর্মে বিধানটি কেন অসাংবিধানিক হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
রিটে আইন মন্ত্রলায়ের লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি এফেয়ার্স বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটকারী ১০ জন আইনজীবী হলেন: মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. আসাদ উদ্দিন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল এবং যায়েদ বিন আমজাদ।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপড় ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয় মর্মে রিট পিটিশনে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ২০১৭ সালে প্রণীত বাংলাদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (ডিসিপ্লিনারী) রুলস এর সাংবিধানিক বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়।
রিট আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা এবং মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বে সুপ্রিম কোর্টের ২০১২ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আদেশ প্রতিপালনে অগ্রগতি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে অন্তবর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ১১৬ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপড় ন্যস্ত রয়েছে। একই অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতি উক্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শ করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
মূলত রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাস্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে অধঃস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের এই দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের উপড় ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাস্ট্রপতির উপড় ন্যাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের প ম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘‘এবং সুপ্রিমকোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে” শব্দগুলো সন্নিবেশিত করা হয়। পরবর্তীতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ প ম সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা করলে পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের বর্তমান একই বিধানটি প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে এই বিধানটিই বিদ্যমান রয়েছে।
রিট আবেদনে যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয়; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই মৌলিক কাঠামো বিনষ্ট করা হয়েছে। একই সাথে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬ এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থি।
পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অধস্তন আদালতের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ