রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক-মানবিক রাষ্ট্র গঠনের দাবি
২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৯:১৯ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪ ১৯:২২
ঢাকা: রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। ছাত্র-জনতা হত্যা ও সহিংসতায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তারা বলেছেন, আন্দোলনে নিহতদের পরিবারগুলোকে সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য, ঢাকা ছাড়াও সুজন’র উদ্যোগে একই দাবিতে সারাদেশের সব জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের মানববন্ধনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, ওয়াই ডব্লিউ সি এ, ক্যাপ বাংলাদেশ, হেল্প বাংলাদেশ, বাংলাদেশ রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি, টিএমএসএস, হিউম্যান রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ, হিউম্যান রাইটস ডেভলেপমেন্ট সেন্টার, সিরাজুল আলম খান ফাউন্ডেশন ইত্যাদি সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
সুজন’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, হেলফ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ওয়াই ডব্লিউ সি এ প্রতিনিধি পুরবী তালুকদার, সিরাজুল আলম খান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফারাহ খান, সুজন’র ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক মাহবুল হক, ঢাকা মহানগর কমিটির সম্পাদক জুবাইরুল হক নাহিদ প্রমুখ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা তা থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছিলাম। নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের আরেকটি সুযোগ তৈরি হলেও আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে একইসঙ্গে দুটো কাজ করতে হবে। প্রথমত, বিগত সময়ে যারাই দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বিচার করা। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনী জনগণের ওপর গুলি না চালিয়ে একটি অভূতপূর্ব কাজ করেছে। এখন বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে সহায়তা করবে।’ বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা অতীতে বিভিন্ন সময় সুজন’র পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি এবং নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নাগরিক সনদ প্রণয়ন করেছি। অতীতে ক্ষমতাসীনরা যদি সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করত, তাহলে তাদের এই করুণ পরিণতি ভোগ করতে হত না।’
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘যে দেশে মানুষকে তিন-চার মাইল দূরে হেঁটে গিয়ে বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা তুলতে হয়, সেই দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া কোনোভাবেই মেনে যায় না। তাই দ্রুত পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে তার জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। ছাত্র সমাজের অভিলাষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নাগরিক সমাজকে সেই স্বপ্নের জাল বুনে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়েই ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম