ভারতের বাঁধ খুলে বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে রাবিতে মশাল মিছিল
২৩ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৪৬ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৫৮
রাবি: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা মাজার চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্ত্বর থেকে একটি মশাল মিছিল বের হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা মাজার চত্বরে এসে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভকারীরা ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া, গো ব্যাক মোদি’, ‘স্টপ দ্য রেলওয়ে পাস, ইন্ডিয়া ইজ ফ্লোডিং আস’, ‘হাসিনা গেছে যেইপথে, মোদি যাবে সেইপথে’, ‘যদি চাও মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘বাংলাদেশের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ভারতের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘বর্ডার কিলিং এর বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘পানি রাজনীতির বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সেভেন সিস্টার, আমাদের আমাদের’ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মশাল মিছিলে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, জুলাই মাসে যে পিশাচ রক্ত পান করলো দেশের অসংখ্য ছাত্র, শিশু ও ছাত্রজনতার। সেই বিশাচ এখন বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতের আরেক পিশাচের সাথে মিলিত হয়ে আবার বাংলাদেশের রক্ত চোষার পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের উজানে যেসকল নদী রয়েছে সেগুলোতে বাঁধ নির্মাণ করে আমাদেরকে শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানিশূন্য করে, সেচ ব্যাহত করে, ঠিক তেমনিভাবে যারা জুলাইয়ে পরাজিত হলো, বিতাড়িত হলো সেই শক্তির ইন্ধনে তারা আমাদের দেশে পানি সন্ত্রাস চালাচ্ছে। নোয়াখালী ফেনীতে মানুষ পানিতে ভাসছে, গবাদি পশু পানিতে ভাসছে, রাস্তা কালভার্ট-ব্রিজ পানিতে ডুবে যাচ্ছে। তারা আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস করছে, আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চল লবনাক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্ব দরবারে জাতি সংঘের কাছে বিচার দেব, আন্তর্জাতিক নদী কমিশনের কাছে বিচার দেব। ভারতকে বিচারের আওতায় নিয়ে এসে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে আমরা তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করব।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টির মতো নদী রয়েছে। ভারত অন্যায়ভাবে সেই নদীগুলো বাঁধ নির্মাণ করেছে। আন্তর্জাতিক কোনো নদীতে বাঁধ নির্মাণের ন্যায় সঙ্গত কোন উদাহরণ আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু ভারত যেটা করেছে সেটা একেবারেই অন্যায়। ভারত এটা করতে পেরেছে তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের কারণে। তারা ভারতের নতযানু সরকার, তাই তারা প্রতিবাদ করতে পারেনি। কিন্তু ভারত সরকার জানে না এই বাংলার জনতা, এই বাংলার ছাত্রসমাজ তাদেরকে মেনে নিবে না। বর্তমানে বহাল থাকা চুক্তিগুলো যদি বাতিল করা না হয় তাহলে ছাত্রজনতা আবার রাজপথে নামবে, তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করবে।
ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রোকৌশল রাকিব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ওপর ভারতের শোষণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসতেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ভুখন্ডের ওপর দিয়ে ভারত সরকার খুনি হাসিনার সাথে যে রেল করিডোরের চুক্তি করেছে তা আমরা অবিলম্বে বাতিল চাই। খুনী মোদি আর খুনী হাসিনার মধ্যে যে অসম চুক্তি হয়েছে আমরা এ চুক্তি মানি না। বাংলাদেশের ফেনী ও নোয়াখালীতে যে বন্যা হয়েছে এর জন্যে দায়ী হাসিনা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। আমরা মনে করি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। আমরা পাকিস্তানের যে জিঞ্জির ছিড়েছি তা ভারতের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নয়। আমরা প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রুদ্র আল মুত্তাকিন সঞ্চালনায় এসময় প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনইউ