Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আয়নাঘর’ নিয়ে পরিপূর্ণ প্রতিবেদন চেয়েছে মানবাধিকার কমিশন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ আগস্ট ২০২৪ ২২:২৪ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৪ ১৩:৫৮

ঢাকা: বহুল আলোচিত ‘আয়নাঘর’ সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ‘আয়নাঘরে’র বাস্তব অবস্থা, এর পরিচালনাকারী, অন্তরীণ ব্যক্তিদের পরিচয়, সংখ্যা, কোন আইনে তাদের অন্তরীণ করা হয় এবং সেল তৈরির নেপথ্যে কারা ছিল— এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ বিবরণ (প্রতিবেদন) কমিশনে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বুধবার (২১ আগস্ট) ইংরেজি দৈনিক The Daily Star পত্রিকায় প্রকাশিত ‘Inside the Aynaghar’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ এবং একই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এসব প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উদ্বেগ থেকেই স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পরিপূর্ণ তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।

রাজনৈতিক বা বিভিন্ন বিবেচনায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের এক গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালকের অধীনে পরিচালিত আয়নাঘর নিয়ে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুইডেনভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম নেত্র নিউজ। সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন মুখ খুললে আয়নাঘরের ভয়াবহতা আরও প্রকটভাবে সামনে চলে আসে।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সই করা সুয়োমটোতে বলা হয়েছে, দেড় দশক ধরে গুম করা ব্যক্তিদের ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত বন্দিশালায় অমানবিক অবস্থায় রাখা হতো। তাদের মধ্যে ফিরে আসা ব্যক্তিরা এখন নির্মমতার বর্ণনা দিচ্ছেন। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ভুক্তভোগীদের বর্ণনা একত্রিত করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এর মধ্যে অনেকগুলো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতর (ডিজিএফআই) পরিচালিত ছিল। এই জায়গাগুলো বাইরের পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখানে বন্দিরা বাইরের কোনো আলো দেখতে পান না।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের শাসনামলে আয়নাঘরে দিন, মাস, এমনকি বছরের পর বছর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেছেন— এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার। পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা, ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের প্রসঙ্গ ও তাদের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার ২০২২ সালের ১২ মে জাতিসংঘকে লিখেছিল, ‘কথিত গুমের মামলাগুলো তদন্ত করার পরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে মানুষ প্রায়ই তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যায়। কখনো কখনো তারা পারিবারিক কলহের কারণে বা ব্যবসায়িক দায় এড়াতে আত্মগোপনের পথ বেছে নেয় এবং কেউ কেউ সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে।’

২০২১ সালের প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৬০০ জনেরও বেশি মানুষকে গুম করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুম করা ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু মানুষকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, আদালতে হাজির করা হয়েছে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অন্তত ১০০ জন এখনো নিখোঁজ।

বিগত সরকার পতনের পরদিন থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই পরিবারের কাছে ফিরে আসতে শুরু করলে দেড় দশক ধরে সরকারের হাতে গুমের সত্যতা প্রকাশ পায় এবং প্রকৃত চিত্র সামনে চলে আসে।

কমিশন বলছে, দীর্ঘ দিন ধরে আয়নাঘরে অবস্থানরত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার থেকে যে ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত নির্মম ও অমানবিক। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়নাঘর নামক যে গোপন নির্যাতন সেলের তথ্য উঠে এসেছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকাশ্য আদালতে দ্রুত বিচার করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও আয়নাঘরে আটক বন্দিদের বিচারের সম্মুখীন না করে বছরের পর বছর আয়নাঘর নামক গোপন ঘরে আটকে রেখে বন্দিদের নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হতো।

সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নিখোঁজ বা গুমের অভিযোগ কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিংবা কারও অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রহণ করে সরকারের কাছে কেবল প্রতিবেদন তলব করতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারার সীমাবদ্ধতার কারণে কমিশন এ ক্ষেত্রে নিজে তদন্ত করতে পারে না বলে কেবল সরকারের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে এই প্রতিবেদন পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আইনের এই সীমাবদ্ধতা কমিশনকে অনেকটা অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়, যার আশু সংস্কার প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আয়নাঘর নামক নিষিদ্ধ কারাগারে বছরের পর বছর আটক রেখে যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে, তা একাধারে সংবিধান ও আইনের শাসনের পরিপন্থি এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে কমিশন। বিনা বিচারে আটক থাকার ফলে এসব বন্দিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার হকদার বলেও মানবাধিকার কমিশন উল্লেখ করেছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

আয়নাঘর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন টপ নিউজ প্রতিবেদন মানবাধিকার কমিশন

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর