Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কার করতে কতদিন লাগবে?— প্রধান উপদেষ্টাকে ফয়জুল করীম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২৪ ১৬:২৪ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৪ ১৮:০৩

ঢাকা: সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কতদিন লাগবে— প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটি জানতে চেয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুরে পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে জানতে চান।

সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘গত রোববার (১৮ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, পাঁচটি খাতে সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম— এই পাঁচটি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

‘আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, বিগত সরকার রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। বর্তমান সরকার এসব প্রতিষ্ঠান কত দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে, তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, বর্তমান সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরন ও প্রক্রিয়া কী হবে এবং কত দিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতি দ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে’— বলেন সৈয়দ ফয়জুল করীম।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতা শাহাদাত বরণ করেছেন। প্রায় ৩০ হাজার আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। যাদের মধ্যে অনেক শিশু-কিশোরও রয়েছে। যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখনো সঠিক চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন। সরকার ঘোষণা দিয়েছিল আন্দোলনে আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

ফয়জুল করীম বলেন, ‘আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনটি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী।’

‘অতএব, তিনটি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী তিনটি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশীলব ছিল, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে। পাশাপাশি আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায় পূর্বক বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চাই’— বলেন ফয়জুল করীম।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন উৎখাতের সংগ্রামের সূচনা করেছে আমাদের শিক্ষার্থী সমাজ। তাদের অসীম সাহস, ত্যাগ ও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব আমাদের গর্বিত করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। আমাদেরও অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সহযোগী সংগঠনের সারা দেশে মোট শাহাদাত বরণ করেছেন ১৮ জন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। এর মধ্যে গুরুতর আহত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫০ জনেরও অধিক।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে ৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। প্রস্তাবগুলো হলো—

১. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। একই সাথে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সকল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্থ হবে, তাদেরকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

২. তদন্ত সাপেক্ষে বিগত বছরের সকল দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সকল সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সকল দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

৩. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৪. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

৫. নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে।

৬. আওয়ামী দুঃশাসনের বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষা খাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৭. গ্রাম পুলিশকে জাতীয়করণ করে তাদের সম্মানজনক বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।

কর্মসূচি

উপরোক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নে জনমত গড়ে তুলতে ইসলামী আন্দোলন আগামী ২১ থেকে ৩১ আগস্ট দেশের সকল জেলা/মহানগরে তৃণমূল দায়িত্বশীল সম্মেলন এবং ১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দেশের সকল থানায় গণসমাবেশ করবে।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ টপ নিউজ প্রধান উপদেষ্টা ফয়জুল করীম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর