গতি ফিরেছে চট্টগ্রাম বন্দরে, কেটেছে কনটেইনার জটের শঙ্কা
১৯ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৫ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪ ২২:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রায় একমাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে চট্টগ্রাম বন্দর। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণে কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। এর ফলে বন্দরে কনটেইনার জটের শঙ্কা কেটেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইন্টারনেট প্রবলেম- এজন্য আমাদের কনটেইনার ডেলিভারিটা কমে গিয়েছিল। বন্দরের অভ্যন্তরে যদিও আমরা জাহাজে পণ্য ওঠানামা প্রায় স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম, কিন্তু কনটেইনার ডেলিভারি না হওয়াটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আমাদের কনটেইনার ডেলিভারি অনেক বেড়েছে। বলা যায়, ডেলিভারিটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বন্দরের অভ্যন্তরে সব কার্যক্রমও একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহ ধরে বন্দর থেকে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টিইউস কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। এর মধ্যে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার আছে, খালি কনটেইনার আছে, আবার রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারও জাহাজে তোলা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস কনটেইনার রাখার জায়গা আছে। জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকে পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি একেবারে কমে গিয়েছিল। এসময় দফায় দফায় ঘোষিত কারফিউ এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় কাস্টমসে শুল্কায়ন কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে এর প্রভাব পড়ে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির ওপর।
আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বন্দরে কনটেইনারের পরিমাণ ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যাতে মারাত্মক জটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এরপর গত এক সপ্তাহ ধরে বন্দরের কার্যক্রমে আবারও গতি ফেরে। কাস্টমসে শুল্কায়ন কার্যক্রম সচল হওয়া, মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির পরিমাণও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি কনটেইনার দ্রুত ডেলিভারিসহ সব কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে বন্দরের কর্মকর্তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত ১৩ আগস্ট একদিনে রেকর্ডসংখ্যক ৫ হাজার ১০০ টিইইউস কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়। এর আগে-পরে এক সপ্তাহ ধরে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার করে কনটেইনার প্রতিদিন ডেলিভারি হচ্ছে।
এর ফলে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে সোমবার (১৯ আগস্ট) কনটেইনার আছে ৩৯ হাজার ৯০৮ টিইইউস। আগেরদিন রোববার ছিল ৪০ হাজার ৮৬৫ টিইইউস।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে ৩৪ থেকে ৩৫ হাজার কনটেইনার থাকে। সেটা ৪০ হাজার পর্যন্ত গেলেও আমাদের সমস্যা হয় না। কারণ, আমাদের ৫৩ হাজারের বেশি কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আছে। এখন যে গতিতে কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে, তাতে আর জট তৈরির কোনো আশঙ্কা নেই। এক সপ্তাহ আগেও ৪৪ হাজারের মতো কনটেইনার ইয়ার্ডে ছিল। সেটা আজ (সোমবার) ৩৯ হাজারে নেমে এসেছে। সুতরাং বন্দরের কার্যক্রম স্মুথ হয়ে গেছে, এটাই প্রমাণ।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ