সাবেক ভূমিমন্ত্রী-ডিএমপি কমিশনার ও হারুনের বিরুদ্ধে তদন্তে দুদক
১৮ আগস্ট ২০২৪ ২২:৫৩ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪ ১০:৪০
ঢাকা: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে এই তিনজনের বিরুদ্ধে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে তাদের এসব অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানি প্রায় ২০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড (দুই হাজার ৭৭০ কোটি টাকা) মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি কেনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউজ করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ ও এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ পরিসংখ্যান পেয়েছে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচারের টাকায় গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কিনেছেন ফ্ল্যাট। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রে তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৯ ফ্ল্যাট। এ ছাড়াও লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আটটি কোম্পানি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০ কোটি ৩১ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। এরপর আরও কিছু অভিযোগ জমা হলে তা যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অভিযোগে বলা হয়েছে— আছাদুজ্জামান মিয়া নিজ নামে তো বটেই, এর বাইরে স্ত্রী আফরোজা জামান, তিন সন্তান আসিফ শাহাদাত, আয়েশা সিদ্দিকা ও আসিফ মাহাদীন এবং শ্যালক-শ্যালিকা, ভাগনেসহ আরও অনেকের নামে-বেনামে হাজার-হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ভাঙ্গা হাইওয়ের পাশে এবং রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকাসহ আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, জোয়ার সাহারা, সাভার ও পূর্বাচলে রয়েছে জমি, প্লট ও বাড়ির ছড়াছড়ি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বাবার কল্যাণে আছাদুজ্জামানের তিন সন্তান অল্প বয়সেই (৩৫ বছর, ৩১ বছর ও ২১ বছর) শত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার স্ত্রী আফরোজা জামান গৃহিণী ও নিজস্ব কোনো আয়ের সংস্থান না থাকলেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক দামি ফ্ল্যাট-প্লট এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে রয়েছে কোটি-কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জমি।
অভিযোগে আরও উঠে এসেছে, আছাদুজ্জামানের শ্যালক-শ্যালিকার নামেও কোটি কোটি টাকার জমি রয়েছে। আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর সৎ ভাই হারিচুর রহমান সোহানের নামে রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। আছাদুজ্জামান নিজেও নামে-বেনামে অনেক ব্যবসাতেই বিনিয়োগ করেছেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে উঠে এসেছে, তিনি নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে ৪০ একরেরও বেশি জমি নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে বিলাসবহুল প্রমোদাগার। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময় থেকেই পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ির পাশের হাওড়ে জমি কিনতে শুরু করেন। নামে-বেনামে তার কমপক্ষে ১০০ একর জমি রয়েছে। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রেও হারুনের শত শত কোটি টাকার সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
অবৈধ সম্পদ আছাদুজ্জামান মিয়া টপ নিউজ ডিএমপি কমিশনার ডিবি হারুন ডিবিপ্রধান দুদক সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ সাবেক ভূমিমন্ত্রী হারুন অর রশিদ