আজই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন— রাষ্ট্রপতিকে ফখরুল
৬ আগস্ট ২০২৪ ১৫:১৮ | আপডেট: ৬ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৪৮
ঢাকাঃ অন্তর্বতীকালীন সরকার আজকেই গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কালবিলম্ব না করে আপনি আজকে ২টার মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন। অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূণ্যতা দেখা দিতে পারে।”
কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তবর্তীকালীন সরকার হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেনে কিনা?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব।’
‘এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান। তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছেৃ তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’— বলেন মির্জা ফখরুল।
আপনারা কি অন্তর্বতীকালীন সরকারের নাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থির করেছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকুলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতার জন্য আপনারা কাজ করেছেন। দুঃখপ্রকাশ করছি এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী তারা কয়েকটি টিভি সেন্টারে অগ্নিসংযোগ করেছে, ভাংচুর করেছে। এটা মুক্ত স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই যে, সমস্ত শহীদ যারা ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদ জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের আমাদের সন্তানদের যারা তাদের মেধা বুদ্ধিমত্তা সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকে রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় অর্জন করেছেন আমরা তাদের স্যুালেট জানাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সব ব্যক্তি, পেশাজীবী যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আছেন তাদের সকলকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই বিজয় অর্জন করার জন্য। এই বিজয় অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের এ্ স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। সেই স্বাধীনতা তখনই সুসংহত হবে যখন আমরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারব। আর সেজন্য আজকে প্রয়োজন সংযম এবং পরমতসহিষ্ণুতার জন্য নিজেকে তৈরি করা।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই, যে এখন এরোগেন্টস, রেজিয়েন্স এটা কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের। এখন যেটা প্রয়োজন ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন, দয়া করে এটা এই মুহুর্ত থেকে বন্ধ করুন। যারা এটা করছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়, তারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে। এ বিষয়গুলো সবার মনে রাখতে হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সারা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আমার দলের নেতা-কর্মীদেরকে অনুরোধ করব, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে একটা ঠান্ডা অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্য্যাগ করে পালিয়ে গেছে সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে। এরপর অন্তর্বতীকালীন বা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা হবে তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম সবাইকে প্রথম যে বলেছেন, সবাই শান্ত হতে বল। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ। জনগণকে সর্তক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে।’
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি… সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।’
তারেক রহমান কবে ফিরবেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাল্লাহ।’
গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আন্দোলনে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান।
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ