নিহত হকারের মায়ের আহাজারি— আমার ছেলের দোষ কোথায়
১৬ জুলাই ২০২৪ ২২:৩০ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৩:১০
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আরও এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর তার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিহত শাহ জাহান (২৪) নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে পাপোশ বিক্রি করতেন। তবে কোথায় বা কীভাবে তিনি নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় ওই তরুণকে ধানমন্ডি ২ নম্বরে অবস্থিত পপুলার হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে থাকা মরদেহটি শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। শাহ জাহানের মা আয়েশা আক্তারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি। একটি প্রশ্নই তিনি শুধু করছিলেন— ‘আমার ছেলের দোষ কোথায়?’
আরও পড়ুন-
- ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
- সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে, নিহত ৬
- ঢাকাসহ কয়েক জেলায় বিজিবি মোতায়েন
- শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলায় টিআইবির নিন্দা
- দেশের সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
- ঢাবিতে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ, নাশকতায় জড়িত হলে ব্যবস্থা
- কোটা আন্দোলনে প্রাণহানি: ৩০ নাগরিকের নিন্দা, আলোচনায় বসার আহ্বান
আয়েশা আক্তার জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। বাবা মহসিন আলী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে শাহ জাহান ছিলেন তৃতীয়। তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর চাঁদ মসজিদ এলাকার জলিল মিয়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন। পাশেই আরেকটি বাড়িতে থাকেন আয়েশা আক্তার। শাহ জাহান নিউমার্কেট এলাকায় বলাকা সিনেমা হলের সামনের ফুটপাতে হকারি করে পাপোশ বিক্রি করতেন।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে শাহ জাহানকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. আলী মিয়া ও তার সহকারী শাকিল জানান, তারা ইবনে সিনা হাসপাতালের অধীনে অ্যাম্বুলেন্স চালান। তাদের মালিক মিজান ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন, দ্রুত পপুলার হাসপাতালে গিয়ে একটি রোগীকে নিয়ে বাড্ডায় যেতে হবে। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ধানমন্ডির সিটি কলেজের পাশে পপুলার হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানকার জরুরি বিভাগ থেকে কয়েকজন দ্রুত শাহ জাহানকে মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন।
আলী মিয়া ও শাকিল বলেন, আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়। তবে তাকে নিয়ে এলেও তার নাম-পরিচয় কিছুই জানি না। সে কীভাবে বা কোথায় আঘাত পেয়েছে, সেগুলোও কিছুই আমরা জানি না।
নিহত শাহ জাহানের মা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকায় মারামারির কথা শুনে বারবার শাহ জাহানকে ফোন দেই। কিন্তু ছেলে তো ফোন ধরে না। ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে শুনি ঢাকা মেডিকেলে দুইটা লাশ আছে। এখানে এসে দেখি, ছেলে আমার লাশঘরে পড়ে আছে।’
কথা বলতে বলতে বারবারই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আয়েশা। বারবার তিনি একই কথা বলতে থাকেন, ‘কে মারল, কারা মারল, কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের দোষ কোথায়?’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, পপুলার হাসপাতাল থেকে এক তরুণকে নিয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। পরে তার পরিবারের সদস্যরা এসে মরদেহ শনাক্ত করেছেন। তিনি পেশায় হকার ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর