Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে রেলপথ অবরোধে শুরু ‘বাংলা ব্লকেড’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৪ ১২:৩৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টা ৩৫ মিনিটে নগরীর দেওয়ানহাট এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা রওনা দেন। ১১টা ৩৩ মিনিটে দেওয়ানহাট এলাকায় ট্রেন থামিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে নির্দিষ্ট সময়ে চারটি আন্তঃনগর ট্রেন চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে দেওয়ানহাটে। দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে মহানগর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। তারা এখনও কিছু সিদ্ধান্ত দেননি।’

আন্দোলনের সমন্বয়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটা ছেড়েছে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। আমরা আসার আগেই কিছু শিক্ষার্থী রেল লাইন অবরোধ করেছে। সরকার থেকে এখনও ফাইনাল কিছু জানানো হয়নি। তাই আমরা আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান নেব। কোনো ট্রেন চলতে দেব না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত দুইদিন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা, যার বন্ধ ছিল যান চলাচল। তীব্র যানজটের ফলে নগরবাসীকে পড়তে হয়েছিল ভোগান্তিতে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সারাবাংলা/আইসি/ইআ

কোটাবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রাম টপ নিউজ বাংলা ব্লকেড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর