ঝুলন্ত সংসদের পথে ফ্রান্স, আতালের পদত্যাগপত্র নেননি ম্যাক্রো
৮ জুলাই ২০২৪ ২৩:২৪ | আপডেট: ৯ জুলাই ২০২৪ ১০:৩৩
সংসদ নির্বাচনের অপ্রত্যাশিত ফলাফলে রাজনৈতিক সংকটের মুখে ফ্রান্স। নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্যদিকে যে তিনটি রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, তাদের মধ্যেও অতীতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো নজির নেই। এ অবস্থায় ঝুলন্ত সংসদ ও অনিশ্চিত এক রাজনৈতিক সংকটের মুখে রয়েছে ইউরোপের দেশটি।
এদিকে নিজের দল সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ‘নৈতিক পরাজয়’ মেনে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল। তবে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট বিবেচনায় সে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি ম্যাক্রো।
বিবিসি, ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)। ওই সময় বামপন্থিদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) পেয়েছিল ২৮ শতাংশ ভোট, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর নেতৃত্বাধীন মধ্যপন্থি জোট এনসেম্বল পেয়েছিল ২০ শতাংশ ভোট।
ধারণা করা হচ্ছিল, আরএনের হাতধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে সরকার গঠন করবে কোনো কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল। তবে রোববারের ভোট সব হিসাব পালটে দিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল এখনো ঘোষণা না হলেও বুথফেরত জরিপের সবশেষ তথ্য বলছে, এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ আসন পাচ্ছে বামপন্থি জোট এনএফপি— ১৮২টি। ১৬৮টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর এনসেম্বল জোট। ডানপন্থি আরএন শেষ পর্যন্ত ১৪৩টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থান পেতে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর ফ্রান্সের রাজনীতিতে ডানপন্থিদের উত্থান ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাকি দলগুলো। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ম্যাক্রোর জোটের অনেক প্রার্থীই বামপন্থিদের জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এই কৌশলেই ডানপন্থিরা শেষ পর্যন্ত আর ভোটের দৌড়ে পেরে ওঠেননি, অপ্রত্যাশিত জয় পেয়ে যায় বামপন্থি এনএফপি।
এদিকে ৫৭৭ আসনের ফ্রান্স সংসদে সরকার গঠনের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে অন্তত অর্ধেক তথা ন্যূনতম ২৮৯টি আসনে জয় পেতে হয়। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের যে ফল আসতে যাচ্ছে তাতে কোনো দলই একক এইসারাবাংলা/টিআর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে এনসেম্বল জোটের অনেক প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও সরকার গঠনের জন্য এনসেম্বলের সঙ্গে এনএফটির জোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের প্রধান তিন দল বা জোটের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা না থাকার কারণেই এখন ঝুলন্ত সংসদের পথে হাঁটছে ফ্রান্স, যেটিকে দেশটির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল ও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর রাজনৈতিক জোট এনসেম্বল নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। একে নৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখছেন আতাল। সে কারণেই সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে পদত্যাগপত্র জমা দেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর কাছে। ম্যাক্রো অবশ্য সে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি চলমান রাজনৈতিক সংকট বিবেচনায়। ফ্রান্স রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা পর্যন্ত আতালকেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ম্যাক্রো বলেন, ভোটারদের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তারা তাদের পছন্দের কথা ভোটের মাধ্যমে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকেও আমি শ্রদ্ধা করি। তবে দেশের স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করে আমি তাকে সাময়িকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে আহ্বান জানাব।
সারাবাংলা/টিআর
আরএন ইমানুয়েল ম্যাক্রো এনএফপি এনসেম্বল গ্যাব্রিয়েল আতাল টপ নিউজ ডানপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট ন্যাশনাল র্যালি ফ্রান্স ফ্রান্সের নির্বাচন ফ্রান্সের সংসদ নির্বাচন বামপন্থি জোট