Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্দোলনকারীদের কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিনিধি

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২৪ ০০:৪১ | আপডেট: ৮ জুলাই ২০২৪ ১০:১৭

কোটাবিরোধী নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছেন রাজপথে। ছবি: সারাবাংলা

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পর হাইকোর্টের রায়ে ফের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এর অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দিয়ে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল করে দিয়েছিলেন তারা। এর মধ্যেই কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সেই আলোচনায় সরকারপক্ষের একমাত্র উদ্বেগ ছিল— কোটাবিরোধী আন্দোলনে কোনো ধরনের ‘ডাবল মিনিং’ আছে কি না।

বিজ্ঞাপন

কোটা বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে টানা শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রোববার (৭ জুলাই) অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বড় একটি অংশ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিল এমন চিত্র।

এর মধ্যেই সন্ধ্যায় জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধি আন্দোলনের চার সমন্বয়ককে ডেকে নিয়েছেন ‘আলোচনা’ করার জন্য। চার সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলে সারাবাংলা জানতে পেরেছে, ওই প্রতিনিধির সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। টিএসসিতে তাদের চার সমন্বয়কের সঙ্গে ওই তিনজনের আলোচনা হয়েছে। তবে ওই প্রতিনিধির পরিচয় সারাবাংলা জানতে পারেনি।

আরও পড়ুন-

কোটাবিরোধী আন্দোলনের চার সমন্বয়কের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলমানে আন্দোলন কেবলই কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা বিশেষ কোনো ইন্ধন রয়েছে— এটিই ছিল প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রতিনিধির মূল জিজ্ঞাসা। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয় আলোচনায় স্থান পায়নি। আর আলোচনা হয়েছে দুই দফায়— একবার বিকেল ৩টার দিকে রোববারের কর্মসূচি শুরুর আগে, আরেকবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে।

বিজ্ঞাপন

রোববার সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের তিনজন হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস ইসলাম ও নাহিদ ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসতে আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আন্দোলনের মূল মঞ্চ থেকে জানানো হয়, আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদকেও ডেকে নিয়েছেন ওই প্রতিনিধি।

আলোচনায় অংশ নেওয়া সমন্বয়কদের একজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, “তিনি কেবল জানতে চেয়েছেন, এই আন্দোলনের কোনো ‘ডাবল মিনিং’ আছে কি না! অর্থাৎ অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না! এর বাইরে আর কিছুই তিনি জানতে চাননি।”

হাসনাত বলেন, ‘তিনি নিজেই বলেছেন, অন্য কিছু জানতে চাওয়ার এখতিয়ারও তার নেই। তিনি শুধু আন্দোলনের কারণটাই জানতে চান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা যেন জানানো সম্ভব হয়, সে করণেই আমাদের আলোচনায় ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।’

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ‘আলোচনা’র জন্য আন্দোলনকারী চার সমন্বয়ককে রোববার সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এ সময়ও আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল শাহবাগ ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। ছবি: সারাবাংলা

সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে হাসনাতসহ সমন্বয়করা ফের শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনের মূল মঞ্চে ফিরে আসেন। তবে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধির সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে বা কী কথা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছুই বলেননি উপস্থিত আন্দোলনকারীদের।

উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ‘সোমবর বিকেলে ফের বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে রোববারের মতো আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন সমন্বয়করা। এ সময় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও ওঠে।

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুই দফায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘তারা তিনজন ছিলেন। বিকেল ৩টার আগে একবার, সন্ধ্যায় একবার তারা আমাদের ডেকে নেন টিএসসিতে। তাদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনা হয়েছে। তারা খুবই ফ্র‍্যাংক ছিলেন। আন্দোলন নিয়ে কোনো ধরনের চাপ দেওয়া বা কোনো বক্তব্য দেওয়া— এ ধরনের কোনো বিষয় ছিল না।’

এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। পরে এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা অংশটি বাতিল করে দেন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়।

গত ৫ জুন হাইকোর্টের এ রায়ের পর থেকেই ফের আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত ১ জুলাই থেকে তারা টানা বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন শুনানি নেননি আপিল বিভাগ। এর ফলে হাইকোর্টের ওই রায় তথা মুক্তিযোদ্ধা কোটাও বহাল রয়েছে। এরই প্রতিবাদে ১ জুলাই থেকে ফের টানা রাজপথে অবস্থান নিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

কোটা বাতিল কোটাবিরোধী আন্দোলন টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর