Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হালদায় ১০ দিনে ৫ মাছের মৃত্যু, কারণ অনুসন্ধানে ২ কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুন ২০২৪ ২১:২৫ | আপডেট: ১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে একের পর এক মরে ভেসে উঠছে কার্প প্রজাতির বড় মাছ, স্থানীয়ভাবে যেগুলো ‘মা মাছ’ নামে পরিচিত। গত দশদিনে হালদা থেকে পাঁচটি বড় মা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া মৃত অবস্থায় ভেসে আসা একটি ডলফিন উদ্ধার হয়েছে। আকস্মিকভাবে এত মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতর।

প্রাথমিকভাবে হালদা গবেষকরা দূষণের কারণে ‘মা মাছের’ মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করছেন। তবে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান না করে ধারণার ভিত্তিতে মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৮৮ কিলোমিটার ‍দীর্ঘ এলাকা জুড়ে আছে হালদা নদী। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ-কার্প প্রজাতির এ চার ধরনের মাছের প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। এছাড়া গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ আছে এ নদীতে।

রোববার (৩০ জুন) দুপুরে হালদা নদীর রাউজান উপজেলা অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মরা কাতলা মাছ ভেসে আসে। জানা গেছে, দেখতে পেয়ে স্থানীয় একজন মৎস্যজীবী সেটি উদ্ধার করে নিজের নৌকায় তুলে ডাঙায় নেন। এরপর তিনি উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও হালদা নদী গবেষণা টিমকে খবর দেন। মৃত কাতলা মাছটির ওজন প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম। দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার।

গত শুক্রবার (২৮ জুন) হালদা নদীর হাটহাজারী উপজেলা অংশের উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকায় দুটি কাতলা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মাছ দুটির মধ্যে একটি সাড়ে ১২ কেজি ও অন্যটি ১০ কেজি ওজনের। ১০ কেজি ওজনের মা মাছটি পঁচে যাওয়ায় সেটি মাটি চাপা দেওয়া হয়। মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বুধবার (২৬ জুন) রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের বাকের আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় নদী থেকে একটি ১০ কেজি ওজনের মৃত রুই মাছ উদ্ধারের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে সেটি মাটি চাপা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগেও একইঘাট থেকে আরেকটি মৃত কাতলা মাছ উদ্ধার করে ডাঙায় মাটিচাপা দেওয়া হয়।

এদিকে প্রায় দেড় বছর পর হালদা নদী থেকে একটি মৃত ডলফিনও উদ্ধার হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকায় নদীতে ভেসে আসা প্রায় ৯০ কেজি ওজনের মৃত ডলফিনটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এরপর সেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ এর সহযোগিতায় নদীর পাড়ে আইডিএফ হ্যাচারি এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া হয়।

ডলফিনটি অবশ্য বয়সের কারণে মারা গেছে বলে জানিয়েছিলেন ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া।

একের পর এক মাছের মৃত্যু প্রসঙ্গে গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দশদিনে পাঁচটি মা মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু অবশ্যই অস্বাভাবিক বিষয়। নদীর পরিবেশের অবস্থা যে মারাত্মক, এটা আর বোঝার বাকি নেই। দূষণের কারণে একের পর এক মাছ মারা যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য বিভাগ মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক মহিবুল্লাহকে প্রধান করে কমিটিতে মৎস্য বিভাগের আরও চার কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একের পর এক মাছ কেন মারা যাচ্ছে, সেটি নিয়ে ভাসা ভাসা কথা না বলে আমরা সত্যিকার অর্থে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কমিটি গঠন করা হয়েছে। দূষণটাকে আমরা সিরিয়াসলি দেখছি। আরও কারণ থাকতে পারে। বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কি না, ব্যাকটেরিয়াল কোনো ডিজিজের কারণে শ্বাসকষ্টে মাছের মৃত্যু হচ্ছে কি না কিংবা বয়সের কারণে সেগুলো মারা যাচ্ছে কি না – এসব বিষয় কমিটি অনুসন্ধান করে দেখবে।’

এ ছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পনেরো কার্যদিবসের মধ্যে মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান, দূষণ শনাক্ত হলে উৎস খুঁজে বের করা এবং প্রতিরোধে সুপারিশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের পাঁচজন টেকনিক্যাল পারসনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হালদা নদীর পানি সংগ্রহ করে সেটা ল্যাবে টেস্ট করবেন। দূষণ পাওয়া গেলে মাঠপর্যায়ে গিয়ে দূষণের কারণ, উৎস এবং সুপারিশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেবেন। আমরা প্রতিমাসেই কিন্তু হালদা নদীর পানি সংগ্রহ করে ল্যাবে টেস্ট করি। যেহেতু গত দশদিনে পাঁচটি মাছে মৃত্যু হয়েছে, একটি ডলফিনও মারা গেছে, এখন আবারও টেস্ট করতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা ডিফিকাল্ট।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

টপ নিউজ প্রজনন কেন্দ্র মা মাছ হালদা

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর