কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পরীক্ষায় বসতে পারেনি ২২ শিক্ষার্থী
৩০ জুন ২০২৪ ১৮:২৬ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ১৯:৩১
টাঙ্গাইল: ভূঞাপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও এক শিক্ষকের প্রতারণার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ২২ পরীক্ষার্থী।
রোববার (৩০ জুন) সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজের ২২ জন পরীক্ষার্থী বিক্ষুব্ধ হয়ে নিকরাইলের পলশিয়া রানী দীনমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে গিয়ে আন্দোলন শুরু ভাঙচুর করতে থাকে। পরে পুলিশের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিনা কারণে পুলিশের সদস্যরা পরীক্ষার্থীদের মারধর করেছে।
পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় কেন্দ্রের বাইরে গেটে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় অভিভাবকরা দোষিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার নিকরাইল শমসের ফকির ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত টাকার চেয়ে বাড়তি টাকা দাবি করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী বাড়তি টাকা দিতে অস্বীকার করে। এই সুযোগে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেন ২২ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন ফরম পূরণের জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীদের বোর্ড থেকে কোনো রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি।
গতকাল শনিবার (২৯ জুন) ২২জন পরীক্ষার্থী কলেজে প্রবেশপত্র নিতে গেলে তাদের ফরম পূরণ হয়নি বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক লোকমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পায়নি।
এ ঘটনায় প্রবেশপত্র বাতিল হওয়া পরীক্ষার্থীরা সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করে। পরে কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রশাসনের আশ্বাসের পর পরীক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করে কেন্দ্র ত্যাগ করে।
পরীক্ষার্থীরা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি করা ৮ হাজার টাকা না দেওয়ায় ফরম পূরণ করেনি। পরে কলেজের বাংলা প্রভাষক লোকমানের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে জালিয়াতির শিকার হয়েছি। টাকা দিয়েও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকের প্রতারণার কারণে। আমরা যেকোনো মূল্যে পরীক্ষা দিতে চাই।
শমসের ফকির ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেন জানান, ওই ২২ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে। সব প্রমাণপত্র আমার কাছে রয়েছে কিন্তু গতকাল রাতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বোর্ডে ফোন করে ২২জন পরীক্ষার্থীর ফরম বাতিল করেছেন।
তবে শমসের ফকির ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা কলেজে কোন যোগাযোগ করেনি। অনেক শিক্ষার্থীর ফরম বিনামূল্যে পূরণ করা হয়েছে। বাড়তি ফি নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য না।’
ভুঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ জানান, পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কেন্দ্রে আন্দোলন করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘২২ জন পরীক্ষার্থী কলেজ কর্তৃপক্ষের অগোচরে এবং অবৈধভাবে এইচএসসি ফরম পূরণ করেছে বলে কলেজ অধ্যক্ষ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ওই ২২ জন পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ বাতিল করায় তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও