৫০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার পক্ষে জি এম কাদের
২৯ জুন ২০২৪ ১৯:২৫
ঢাকা: কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেয়ার প্রস্তাব করে তিনি পাশাপাশি দিতে হলেও কমপক্ষে ৫০% কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা কথা বলেন।
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের ধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অংশ নিয়ে জিএম কাদের এ সব কথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারাবিশ্বে রড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনও নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থির চিত্র তার মধ্যে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রফতানির প্রবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যায়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিহ্রাস। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে।’
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চলতি বছর এপ্রিল শেষে নিট রিজার্ভ ১২.৮০ বিলিয়ন ডলার যা দিয়ে ২ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। অথচ কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করার পরেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানি চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। তাছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয় , টাকার অবমূল্যায়ন হয় এবং মূল্যস্ফীতি হয়। ফলে আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল আবস্থা দেখা দেবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট একটি গতানুগতিক বাজেট। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সংকটময় বলা যায়।
জিএম কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া প্রস্তাব করা হচ্ছে ১,২৭,২০০ (১০.৮৩ বিলিয়ন ডলার) কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে।’
ব্যাংক ঋণ নির্ভর বাজেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের যে খারাপ অবস্থা তার প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ। এ বিষয়ে অতিসম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগের ধাপ ওভারভিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ। আর চলতি ২০২৪ সালের মার্চে খেরাপি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। খেলাপি হিসাবে {খেলাপি ঋণ (১,৮২,২৯৫ কোটি টাকা) + মেয়াদোত্তীর্ন ঋণ (২,৫৭,৩৯২ কোটি টাকা)} ধরলে মোট খেলাপি ঋনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত বিতরন কৃত মোট ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা; সে হিসাবে বিতরণকৃত ঋণের ২৬.৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ী যারা বিপুল অংকের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিক মত দেননি, এটি সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তার ধরা পরেন ও খেসারত দেন। যারা ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাব নিকাশ করেই তা করেন ও সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না। সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের ওপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ ৩০%, সেখানে অবৈধ আয়ের উপর ১৫% কর দিলেই বৈধ হওয়ার যেমন অনৈতিক তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। ফলে, অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলা যায়। অবৈধ অর্থ অর্থাৎ কালো টাকাকে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার প্রস্তাব করছি। দিতে হলেও অন্তত ন্যায় বিচারের স্বার্থে ৩০% এর উর্ধ্বে অর্থাৎ কমপক্ষে ৫০% কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা যায়।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে