Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৪ ২২:৪৭

ঢাকা: প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বাঙালির সব ধরনের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কী সামাজিক, কী সাংস্কৃতিক, কী রাজনৈতিক— যে কোনো ধরনের আন্দোলনের সূত্রপাত যেখান থেকেই হোক, সেটি যদি বাঙালির দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলন হয়, বাঙালির স্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে সেখানে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রদান অবধারিত। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

বিজ্ঞাপন

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে তাদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালায় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী। ফলে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক তথা সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কায় পূর্ববাংলার ছাত্র, তরুণ, যুবক তথা সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানায় এবং রাজপথে নেমে আসে। এ আন্দোলনে কেবল মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নয়, এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাষা-সংস্কৃতিভিত্তিক যে অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়, তার সূত্র ধরেই দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রে অপমৃত্যু ঘটে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধ্বজাধারী মুসলিম লীগের কবর রচিত হয়। এরপর ধাপে ধাপে সৃষ্ট আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্মলাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলন ছাত্র, যুব ও তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় গণ-আজাদী লীগ, ছাত্র ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় কংগ্রেস, তমদ্দুন মজলিস, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ, ছাত্রশক্তি প্রভৃতি সংগঠনের অবদানের কথা। ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা বলতে গেলে এ ভূমিকাটুকু সামনে রাখা আবশ্যক।

রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগ যেমন ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শুরু থেকেই এ আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। শেখ মুজিব গণতান্ত্রিক যুবলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দেন, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এবং কারাভোগ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক। প্রথম পর্যায়ের ভাষা আন্দোলনের সভা-সমাবেশে ও মিছিল-মিটিংয়ে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করলেও চূড়ান্ত পর্যায় তথা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন নিরাপত্তা আইনে বন্দি।

ফলে ভাষা অনেকে আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করলেও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক্ষেত্রে তারা প্রামাণ্য দলিলপত্র অপেক্ষা নিজেদের স্মৃতিকেই সাক্ষ্য মেনেছেন। এতদিন তারা যা বলে আসছিলেন তাতে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের অবদান সম্পর্কে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’গ্রন্থ এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের ফলে ভাষা আন্দোলনের সময়কার অনেক প্রামাণ্য দলিলপত্র সামনে চলে এসেছে। এতে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী মুসলিম লীগের ভূমিকা নতুন করে মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বঙ্গবন্ধু ঢাকায় চলে আসেন এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ঢাকায় এসে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় সমমনাদের নিয়ে নতুন পথে যাত্রা করেন। মুসলিম লীগ ও অবিভক্ত বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের একজন উদীয়মান নেতা হলেও খাজা নাজিমুদ্দীন ও মওলানা আকরম খানের কূটচালে মুসলিম লীগ কুক্ষিগত হয়ে ক্রমে ক্ষমতাকেন্দ্রিক এক জনবিচ্ছিন্ন সংগঠনে পরিণত হলে আবুল হাশিম ও হোসেন সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী নেতাকর্মীরা নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করেন। ফলে সৃষ্টি হয় গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রভৃতি সংগঠন।

ওই সময় মুসলিম লীগ সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে কোণঠাসা হয়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য রাজনীতির মাঠ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। অনেককে কারাবন্দি করে চালানো হয় কঠোর নির্যাতন। ফলে সরকারবিরোধী প্রধান প্রকাশ্য সংগঠন হিসেবে তখন রাজনীতির মাঠে আবির্ভূত হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রধানত, আবুল হাশিম ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের দ্বারা এ সংগঠন দুটি গঠিত হয়, যারা ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে এ অঞ্চলে মুসলিম লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন গড়ে উঠলে তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ছাত্রসমাজ, তরুণ, যুবক ও সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী মুসলিম লীগের অবদানের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ সংগঠন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে সোচ্চার ছিল। ভাষা আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্তে এ রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছি যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণের দাবি করে এবং পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকার কর্তৃক কার্যকর না করা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাবে। আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করার দাবি করা হয়।

ভাষা অন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায়, ১৯৪৯ সালে মূলনীতি কমিটির রিপোর্টে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের পল্টন ময়দানে ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির তুঙ্গ মুহূর্ত ও আগে-পরে আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও সংগ্রাম পরিষদের সভায় অংশগ্রহণে ভূমিকা রাখে।

এ সময় পাকিস্তান সরকার আওয়ামী মুসলিম লীগকে প্রধান প্রতিপক্ষ বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানের জনসভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে বিষোদ্গার করেন। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানী এক বিবৃতি দিয়ে খাজা নাজিমুদ্দীনের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করিতে হইবে।’

ভাষা আন্দোলনকে সুসংগঠিত রূপদানে আওয়ামী লীগ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি ও ছাত্রলীগ নেতা কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। এরপর জেলায় জেলায় সফর করে আওয়ামী লীগ নেতারা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নির্দেশনা দেন এবং অনশন করে আন্দোলনে নতুন গতি আনেন।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করলেও আমতলার সমাবেশের সিদ্ধান্তে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামলে আওয়ামী লীগ নেতারা তা সমর্থন করেন এবং আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে। ওইদিন বিকালে আহত-নিহতদের দেখতে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সর্বপ্রথম হাসপাতালে ছুটে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক।

পুলিশের গুলিবর্ষণে হতাহতের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানী এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ কি করিয়া এইরূপ নির্ম্মম ও অমানুষিক ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে পারেন তাহা আমার পক্ষে বুঝা শক্ত। প্রতিবাদ দিবসের প্রাক্কালে ১৪৪ ধারা জারী করার কোনই যৌক্তিকতা ছিল না। এই বিষয়ে আর বেশী কিছু আলোচনা না করিয়া ঘটনার জন্য আমি একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং অপরাধীদের প্রকাশ্য বিচারের জন্য দাবী করিতেছি।’

পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আইন পরিষদের সভায় ঝড় তোলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনিসহ খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, আলী আহম্মদ খান, মোবারক আলী (বগুড়া), মনিরউদ্দিন আখন্দ (রাজশাহী), আহমদ হোসেন (গাইবান্ধা) প্রমুখকে নিয়ে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগের ১২ সদস্যের পার্লামেন্টারি দল, যার নেতা ও সহকারী নেতা নির্বাচিত হন যথাক্রমে কুষ্টিয়ার শামসুদ্দীন আহমেদ ও আলী আহমদ চৌধুরী।

এ প্রসঙ্গে ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ লেখে, ‘ঢাকা-২২শে ফেব্রুয়ারী—অদ্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে আওয়ামী মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি দল গঠিত হয়। জনাব সামসুদ্দীন আহমেদ দলের নেতা নির্বাচিত হন। এই রূপ দাবি করা হইতেছে যে, এই দলের সদস্য সংখ্যা ১২ জন। তাহাদের মধ্যে মুসলিম দলের মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ আছেন।’

এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অধিকাংশ নেতা গ্রেফতার হলে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আতাউর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে পুনর্গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে গ্রেফতার ও কারা নির্যাতন ভোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা আদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, সহ-সম্পাদক খন্দকার মোশতাক আহমদ প্রমুখ। এছাড়া কারাভোগ করেন খান সাহেব ওসমান আলী, আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেনসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং একুশের চেতনা লালন ও বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ পালন করে ঐতিহাসিক ভূমিকা।

ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ধর্মঘট পালনকালে তিনি গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ মুক্তিলাভের পর ১৬ মার্চ তার সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন পরিষদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রবল আন্দোলন গড়ে তুললে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন রান্নাঘর দিয়ে পালিয়ে যান। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ নেওয়াজ খানসহ অনেক ছাত্রনেতা তার সঙ্গে কারাগারে দেখা করলে তিনি তাদের ভাষা আন্দোলনের নির্দেশনা দেন।

ভাষা আন্দোলনের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন বলেই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত ২১ ফেব্রুয়ারির মূল কর্মসূচির একটি দাবি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি। ফরিদপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন শুরু করলে ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিবৃতি দেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন এবং বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের জোর দাবি তোলেন।

এরপর পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের বন্দিদের মুক্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনকে স্মারকলিপি দেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে বিবৃতি আদায় করেন। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ‘শহীদ দিবস’ পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। চীন শান্তি সম্মেলনে গিয়ে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে অন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের ক্ষেত্রে রাখেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার মর্যাদা দান ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারে নানা নির্দেশনা জারি করেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে এ ভাষাকে বিশ্বদরবারে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। এভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অতি উজ্জ্বল।

সারাবাংলা/এজেড/একে

আওয়ামী লীগ টপ নিউজ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন ভাষা আন্দোলন শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর