Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পানি বাড়ছে, তিস্তাপারে আতঙ্ক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২৪ ১৭:৫৪ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ২০:৩০

রংপুর: টানা কয়েকদিন থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরের জীবনরেখা তিস্তা নদীতে আশঙ্কাজনক হারে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার খুব কাছ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উৎসবের আগে কপালে চিন্তার ভাঁজ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে তিস্তার পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে। ইতোমধ্যে ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উজানের ঢল আর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে শুক্রবার বিকেল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের দিকে ডালিয়া পয়েন্টে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে ভাটির দিকে রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই ভাটি অঞ্চলে নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৩টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ২৮.৬৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে, এই পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় সকাল ৬টায় ২৮.৪০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ২৮.৫০ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ২৮.৫৫ সেন্টিমিটার।

অপরদিকে বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১.৩০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে, এই পয়েন্টে সকাল ৬টায় ৫১.৭৫ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১.৬০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ২৮.৪৬ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বর্ষা মৌসুমের আগে তিস্তায় পানি বাড়ায় নদীপাড়ের মানুষের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আমাদের এখানে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।’

বিজ্ঞাপন

কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকার বাসিন্দারা জানান, শনিবার ভোর থেকে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। বর্ষার আগে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের স্থানীয়দের মাঝে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তারা আরও জানান, এমন পরিস্থিতিতে বন্যা হলে নদীপাড়ের বাসিন্দারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। বাদাম ও শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বন্যায় যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, তিস্তা একটি আন্তঃদেশীয় নদীর যার অববাহিকার মাত্র ১৭ শতাংশ এলাকা বাংলাদেশের অধিকারে রয়েছে, যার পুরোটাই রংপুর বিভাগে অবস্থিত। যদিও অববাহিকার মোট বাসিন্দার ৭১ শতাংশেরই বসবাস এখানে।

নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজানে ভারত অংশে বিশেষ করে সিকিমে নদী অববাহিকার বাসিন্দা অনেক কম। যদিও এ কম মানুষ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেই এখন নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে অববাহিকার উজান ও ভাটির বাসিন্দাদের মধ্যে জীবনমানের দিক থেকে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। তাই রংপুর বিভাগের তিস্তা-তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকাও এখন হুমকিতে।

শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ না থাকায় দীর্ঘায়িত খরায় মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে কৃষিনির্ভর এলাকাটির বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য আহরণ কার্যক্রমও। আবার বর্ষা মৌসুমে নদীর ভারতীয় অংশে অবস্থিত বাঁধগুলোর ফটক খুলে দিয়ে পানির অতিরিক্ত প্রবাহ ছেড়ে দেওয়া হয় ভাটির দিকে। এতে প্রতি বছরই মারাত্মক বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে দেশের তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলটি।

সারাবাংলা/এমও

আতঙ্ক টপ নিউজ তিস্তা বাড়ছে পানি মারাত্মক বন্যা

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর