Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেশি মজুরিতেও মিলছে না শ্রমিক, ধান নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ জুন ২০২৪ ০৮:৫৫ | আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৯:২৩

বোরো ধান পানির নিচে, কিন্তৃ শ্রমিক সংকটের কারণে সেই ধান কাটতে পারছেন না জয়পুরহাটের কৃষকরা। ছবি: সারাবাংলা

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে আলুর পর একটু দেরিতেই রোপণ করা হয় বোরো ধান। অন্যান্য এলাকায় যখন পাকা ধান কাটা প্রায় শেষ, এমন সময় এ জেলায় শুরু হয় বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা। এ কারণেই দেশের অন্যান্য এলাকায় যখন বোরো কাটা শেষ, তখন জয়পুরহাটে মাঠের পর মাঠজুড়ে পড়ে আছে পাকা ধান। গত কয়েক দিন ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় সেই ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। কারণ ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক, এমনকি বেশি টাকা খরচ করেও।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা বলছেন, কৃষিশ্রমিকের সংকটে তারা বেশি ভুগছেন। এখন অধিকাংশ জমির ধানই মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টির পর অনেকের ক্ষেতের ধান পানির নিচেও। কিন্তৃ কৃষিশ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছেন না কেউ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে সাধারণত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৯ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। তবে খাদ্য উৎপাদনের জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ কম হয়েছে। আবাদ হিসাবে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ মেট্রিক টন। আর এ পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। এখনো ৬২ শতাংশ ধান মাঠেই আছে।

কৃষকরা জানান, এ এলাকায় আলু পর ধান রোপণ করা হয়। সে কারণে ধান পাকতে একটু দেরি হয়। এবারও ধান পাকতে দেরি হয়েছে। যে সময় মাঠের পর মাঠজুড়ে ধান পাকে, ঠিক সেই সময়ই শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি টাকাতেও শ্রমিক মিলছে না। গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টির কারণে অনেকের ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। জমানো পানি সরানোর কোনো উপায়ও নেই।

এখন পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৩৮ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ভাসিলা গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, গত বছর এক বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়েছিল দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এবার সেই এক বিঘার ধান কাটতে মজুরি দিতে হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী ও আক্কেলপুর উপজেলার মাতাপুর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকও বললেন একই কথা। তারা বলেন, এবার ধান কাটা শ্রমিকের খুবই সংকট। এর আগে কখনো শ্রমিকের এত সংকট দেখা দেয়নি।

এ পরিস্থিতিতে জেলার বাইরে থেকে কিছু ধান কাটা শ্রমিক আসছেন। তবে তাদের নিয়ে গৃহস্থদের মধ্যে টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে জমানো এক হাঁটু পানির সঙ্গে বজ্রপাতের আতঙ্কে শ্রমিক ও কৃষক উভয়েই মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, বৈরী আবাওহায়ার কারণে পুরোদমে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আবওহায়া ভালো থাকলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে।

শ্রমিক সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, আগামীতে শ্রমিকের সংকট আরও প্রকট হবে। কারণ এ পেশায় নতুন করে আর কোনো লোক আসবে না। আমাদের কৃষকদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যেতে হবে। ধান কাটার যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা তাদের ভর্তুকিতে এসব যন্ত্র কেনার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি তারা সে পরামর্শ গ্রহণ করবেন। তাহলেই কেবল এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। অল্প সময়েই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।

সারাবাংলা/টিআর

কৃষি শ্রমিক জয়পুরহাট ধান কাটা বোরো ধান

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর