বাজেটে শিল্পখাত টিকিয়ে রাখার দিকনির্দেশনা নেই
৮ জুন ২০২৪ ২২:২৬ | আপডেট: ৯ জুন ২০২৪ ১২:১২
ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার বিধান কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি বলেও মন্তব্য সংগঠটির। দেশের শিল্পখাতকে টিকিয়ে রাখার মতো কোনো নির্দেশনাও বাজেটে দেখা যায়নি বলে মনে করছে সংগঠনটি।
শনিবার (৮ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সংগঠনের পক্ষে এসব কথা বলেন।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রধান লক্ষ্য বলা হলেও টানা ১৪ মাস ধরে ৯ শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ প্রস্তাবিত বাজেটে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাজেটে বর্তমান শিল্পগুলো টিকিয়ে রাখার মতো কোনো নির্দেশনা দেখতে পাচ্ছি না। দেশের শিল্প খাত বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছে। দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে নিয়মিত, কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছে না শিল্প সমূহ। সরকারের সংকোচন নীতির এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ড্রাই আপ পলিসির কারণে ব্যাংকগুলো বন্ডে বিনিয়োগের দিকে উৎসাহিত হচ্ছে। আবার সরকারও ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে।
বিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এবং তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। এ বছর প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৬ শতাংশ। নতুন করে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বেকার হয়েছে। ফলে বর্তমান শিল্পগুলোর কস্ট অব ডুইং বিজনেস বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট নিঃসন্দেহে উচ্চাভিলাষী নয়। বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির অনুপাতে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। তার পরেও ঘাটতির ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সংগ্রহ করা হবে। আমরা মনে করি, সরকারের ব্যয় কমিয়ে এবং বিদেশি উৎস হতে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত। বিপুল অর্থ যদি ব্যাংক ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয় তাহলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে চাপ তৈরি হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে বিনিয়োগ না এলেও বর্তমান শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অর্থপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা অত্যান্ত জরুরি।’
কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় মন্তব্য করে সংগঠনটি আরও বলছে, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ আয়কর প্রদানে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে, যা বিসিআই কোনভাবেই সমর্থন করে না। এতে করে বৈধ অর্থ উপার্জনকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। তাছাড়া জমি, প্লট, ফ্ল্যাট কেনার মতো অনুৎপাদনশীল খাতে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা যুক্তিসংগত নয়। জমি ও ফ্ল্যাট কেনায় কালো টাকা ব্যবহার হলে জমির দাম বাড়বে এবং শিল্পায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। কালো টাকা দেশের অর্থনীতিতে অন্তভুর্ক্ত করতে চাইলে সেটা শিল্প ও উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসংস্থান বাড়ার সুযোগ থাকে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম