গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায় ‘আমরা একাত্তর’
৮ জুন ২০২৪ ১৯:২৩ | আপডেট: ৮ জুন ২০২৪ ২১:১১
ঢাকা: ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তা পরের ৯ মাস পর্যন্ত চলে। তা ছিল স্মরণকালের নির্মমতম হত্যাযজ্ঞ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়েছে। এরই মধ্যে গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি উঠেছে। সেই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারাও। ‘আমরা একাত্তর’ নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশের মাটিতে হবে এবং এই জীবদ্দশায় দেখে যেতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি বলে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
শনিবার (৮ মে) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউটে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তারা।
‘আমরা একাত্তর’ এর প্রতিষ্ঠাতা মাহবুব জামান বলেন, ‘২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে আমরা একাত্তর। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে উত্তাল শাহবাগ।’
তিনি বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি নিজামী, গোলাম আজম, কাদেররা এ দেশে শাস্তি পাবে। আর সে বিচার জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, বিজয় এসেছে। আসলে সত্যিকারের বিজয় যেন তারা এনে দিয়েছে। তরুণদের কথা বলছি। ওদের আওয়াজ না উঠলে হয়ত এ মাটিতে কোনো যুদ্ধাপরাধীর বিচার হতো না। দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কতটা স্বস্তির তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
মাহবুব জামান বলেন, ‘ভাবলাম মুক্তিযুদ্ধের এই বিশালতা, বীরত্ব সবার কাছে পৌঁছাতে চাই। সে জন্যই আমাদের স্লোগান জাগো এবং জাগাও।’
সংগঠনের এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস অনেকেই জানেন না। আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করেছে। আমাকে অনেকে বলেছেন ৫৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ ফিরিয়ে আনতে চাও। আমি বলেছি, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে আছি। আমাদের তরুণরা ম্যাজিক্যাল ইন্টিলিজেন্ট নিয়ে কাজ করছে। তথ্য প্রযুক্তিতেও এগিয়ে, অতএব সব ফিরে আসবে। আমরা জাতিকে আবার জাগিয়ে তুলতে চাই এটিই সংগঠনের লক্ষ্য।’
‘আমরা একাত্তর’ এর প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য তরুণদের দেশ প্রেম, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা।
অনুষ্ঠানে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ভ্রমণ, দুঃসাহসী অভিযানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল তরুণ প্রজন্মের তিপ্পান্ন জনকে বিশেষ অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের লাল-সবুজের গৌরব-পতাকা তুলে দেন।
এ সময় পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার বলেন, ‘লাল সবুজের পতাকা মানে বাংলাদেশ। পতাকা মানে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। বাংলাদেশ মানে সস্প্রীতি, সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িকতা। আমরা লাল সবুজের পতাকা বহন করতে চাই গোটা বিশ্বে।’
তরুণ পর্যটক মহুয়া বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। মেয়ে হিসেবে জন্মে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হইনি। আমার সাহস সেখান থেকে। সাহিত্যে ঘেরা আমার পরিবার। সেখানে শিখেছি অনেক কিছু। এমন পরিবারে জন্মে আমি সাহস যুগিয়েছে। আমাকে সাহস যুগিয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পাবলো নেরুদার মতো লেখকেরা।’
চিকিৎসক সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশের সমাজ এমন হোক যেখানে মেয়েদের ছোট চুল কিংবা ছেলেদের বড় চুল নিয়ে সমালোচনা না করে ঘরে ঘরে বিজ্ঞান চর্চা হোক। অন্তত নবম শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন মাইক্রোস্কোপে জীবাণূ পরীক্ষার সুযোগ পায়।’
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর বলেন, ‘জেনোসাইড নিয়ে পারিবারিকভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশের জেনোসাইড নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমি পাঁচ বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পাঁচ বছর ছিলাম রাশিয়াতে। আমি ব্যাপক পরিবর্তনন দেখেছি। পড়াশোনা করতে গিয়ে প্রথম ক্লাসে শিক্ষক বললেন, পৃথিবীতে একটি দেশ তার ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং জয়ী হয়েছে। দেশ নিয়ে কথা বলতে বলা হলো আমাকে। আমার কেমন লেগেছিল সেটি এখানে বসে এখানে বসে বোঝানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাই প্রথম গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে চিঠি দিয়েছিল।’
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউটে এই প্রথমবারের মতো এমন এক আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ‘আমরা একাত্তর।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই ভিন্নধর্মী আয়োজন।
একাত্তরের প্রেরণায় ‘জাগো, জাগাও’ এই স্লোগান নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছুটে আসেন। দীর্ঘদিন পরে সহযোদ্ধাদের কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত অনেকেই।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক, ন্যায় ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং নতুন জাগরণ সৃষ্টির প্রয়াসই ‘আমরা একাত্তর’ এর লক্ষ্য।
সারাবাংলা/জেআর/একে
১৯৭১ আমরা একাত্তর গণহত্যার স্বীকৃতি টপ নিউজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ