বুথফেরত জরিপে পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির জয়জয়কার, মমতা বললেন ভুয়া
২ জুন ২০২৪ ১৯:৪৪ | আপডেট: ৩ জুন ২০২৪ ০১:২৮
প্রায় দেড় দশক ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বড় সব নির্বাচনেই আধিপত্য ধরে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। এবারের লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের পর বুথফেরত জরিপ বলছে, সেই দুর্গে ফাটল ধরতে পারে। সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি। সে ক্ষেত্রে আসন সংখ্যায় তৃণমূল দ্বিতীয় স্থানে নেমে যেতে পারে।
তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বুথফেরত জরিপের ফলাফলকে একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না। এগুলোকে ‘ভুয়া’ অভিহিত করে তিনি বলছেন, তার দলই লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে সমর্থ হবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও আনন্দবাজারের খবর বলছে, শনিবার দেশটির লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটের পর থেকেই বুথফেরত জরিপের ফলাফল আসতে শুরু করে। এর মধ্যে অন্তত তিনটি জরিপের ফলাফল বলছে, বাংলাদেশের লাগোয়া এই রাজ্যেও বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেতে পারে। প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হারেও এগিয়ে থাকবে বিজেপি।
এবিপি-সি ভোটারের বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেতে পারে ২৩ থেকে ২৭টি আসন। ভোট পেতে পারে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। তৃণমূলের আসন এখনকার ২২টি থেকে কমে হতে পারে ১৩ থেকে ১৭টি। প্রাপ্ত ভোটের হারও কমে ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশে নেমে আসতে পারে। অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট হতে পারে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, আসন পেতে পারে এক থেকে তিনটি।
এদিকে নিউজ ২৪ ও চাণক্যের বুথফেরত জরিপের আভাস, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেতে পারে ১৯ থেকে ২৯টি আসন, বিপরীতে তৃণমূল ১২ থেকে ২২টি। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার বুথফেরত জরিপও বলছে, এই রাজ্যে বিজেপির আসন হতে পারে ২৬ থেকে ৩১টি, তৃণমূলের ১১ থেকে ১৪টি। ভোটের হারেও দুটি জরিপেই তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
জরিপগুলো বলছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিছু কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোটাররাও তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
বুথফেরত এসব জরিপের ফলকে একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজ্য নিয়ে যেটা (বুথফেরত জরিপ) দেখাচ্ছে, সেটায় আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি না। এটা একেবারে ফেক, একেবারে ফেক।’
মমতা বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম কী করে বলে দিচ্ছে ওই আসনে ও জিতবে, অমুক আসনে কে জিতবে? কত টাকার বিনিময়ে? আমি এই সংবাদমাধ্যমের হিসাব মানি না। কর্মীদের বলব শক্ত থাকতে। গণনা ভালো করে করতে। যা দেখিয়েছে সংবাদমাধ্যম, তার দ্বিগুণ পাব। প্রত্যেকটা আসন আমরা জিতব।’
রাজ্যে তৃণমূল কতগুলো আসন পাবে— এমন প্রশ্ন রাখা হলে মমতা বলেন, ‘আমি কোনো সংখ্যায় যাব না। কিন্তু একটা কথা আপনাদের বলতে পারি, আমরা যেভাবে মাঠে-ময়দানে নেমে কাজ করেছি, লোকের চোখ দেখেছি, তাতে আমার কখনো মনে হয়নি যে মানুষ আমাদের ভোট দেবে না।’
তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হয়ে কাজ করছে কংগ্রেস ও সিপিএম। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল তিন দলই রয়েছে। মমতা বলেন, “জাতীয় স্তরে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না যদি সিপিএম নাক না গলায়। ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে আমরা যাব। সে রকম পরিস্থিতি এলে নিশ্চয়ই কথা বলব। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।’
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপ ছিল গতকাল শনিবার। আগামী মঙ্গলবার বা বুধবার এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। বুধফেরত জরিপের তথ্য বলছে, গত দুই নির্বাচনের মতো এবারও ক্ষমতাসীন বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে। ‘৪০০ পার’ তথা নির্বাচনে ৫৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি প্রধান ৪০০ আসনের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন, কোনো কোনো জরিপে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার কথাও উঠে এসেছে।
৪০০ আসনের লক্ষ্য পূরণ হোক বা না হোক, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে নরেন্দ্র মোদি টানা তিন মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এর আগে কেবল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুই টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সারাবাংলা/টিআর
টপ নিউজ তৃণমূল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি ভারত ভারতের সাধারণ নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচন