দুই ভাইয়ের কব্জায় মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস
৩১ মে ২০২৪ ১৮:৪৯ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ২১:১২
ঢাকা: দুই ভাইয়ের সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কব্জায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস। অভিযোগ উঠেছে, দুই ভাই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে দলিল জালিয়াতি ও দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে বছরের পর বছর চাকরি করে যাচ্ছেন। দুই ভাই হলেন, আওলাদ হোসেন ও আকিব হোসেন। তারা দুইজনই মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত এক্সট্রা মোহরার (নকলনবিস) হিসেবে কর্মরত।
সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১০ বছর ধরে নকলনবিস আওলাদ হোসেন একই অফিসে চাকরি করছেন এবং নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর। এসব অনিয়ম ঢাকতে তার ছোট ভাই মো. আকিব হোসেনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো অফিস। তেজগাঁও সাব রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কিছু দলিল লেখক, স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও স্থানীয় কিছু চিহ্নিত দালালদের সমন্বয়ে গঠিত এই সিন্ডিকেটের যোগসাজসে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে নানান ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন আওলাদ হোসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নকলনবিস বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সারাবাংলাকে জমি কেনাবেচার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি হচ্ছে বালাম বই আর আওলাদ হোসেন চাকরিতে যোগদানের পর হতে এখন পর্যন্ত কোনো বালাম বই সঠিকভাবে সম্পাদন করেননি। যার সত্যতা মিলবে যদি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আওলাদ হোসেন বিভিন্ন সময় বালাম বই ঘষামাজা এবং ছিঁড়ে ফেলে সেবা প্রত্যাশীদের চাপের মুখে ফেলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।’
মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, নকলনবিস আওলাদ হোসেন বিভিন্ন দলিল লেখকদের স্বাক্ষর/সই নকল করেও বিভিন্ন অফিসে দলিল রেজিস্ট্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওলাদ হোসেনের ছোট ভাই মো. আকিব হোসেন অবৈধ পন্থায় কোনো ধরনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ক কাগজপত্রাদি ছাড়াই মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাজ করে চলেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নাড়াচাড়া করছেন যা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। নকলনবিস আওলাদ হোসেন এবং তার ছোট ভাই আকিব হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য অনুসন্ধানে গেলে কথা হয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার আওতাধীন আওলাদ হোসেনের এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে।
তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওলাদ হোসেন আগে ইয়াবার ব্যবসা করতেন এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। আওলাদ হোসেন বিএনপি- জামায়াতের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন এবং তার অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ নিয়মিত দলীয় কাজে যোগান দিয়ে আসতেন। তবে অনেক চতুর হওয়ার সুবাদে রাতারাতি ভোল্ট পাল্টিয়ে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে গেছেন।
আওলাদ হোসেন তেজগাঁও কুনিপাড়ায় পাঁচতলা আলিশান বাড়ি, টঙ্গী, বাড্ডা, হাতিরঝিলে তার বাবার জায়গায় নিজের অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি ও জমি ক্রয় করেছেন। সিলেটর সুনামগঞ্জে প্রায় তিন একরের বেশি জায়গার ওপরে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে একটি মাছের ঘেরও করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওলাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জমিগুলো পৈতৃক সম্পত্তি।’
ইয়াবার মামলায় গ্রেফতারের বিষয়ে বলেন, ‘২০১২ সালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ তাকে ডেকেছিল।’
এছাড়া তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অন্যান্য অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
তবে সারাবাংলার হাতে আসা মামলার কপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইয়াবার মামলায় তিনি ২ নম্বর আসামি। ওই মামলায় আওলাদ তিন মাস জেলও খেটেছিল। এরপর ওই মামলায় তিনি খালাস পান। ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর তেজগাঁও এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়। সেই মামলা আওলাদ হোসেন ৪ নম্বর আসামি। মামলাটির এখনো চার্জশিট হয়নি।
জানা যায়, আওলাদ বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও তেজগাঁও ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে মিশে এবং সভাপতি তাকে শেল্টার দেয়। যে কারণে অপকর্ম থাকার পরও সবকিছু থেকে বেঁচে যান আওলাদ।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
জমি রেজিস্ট্রেশন টপ নিউজ দুর্নীতি মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস