সব আসামি খালাস, তদন্ত কর্মকর্তাকে পুলিশের কলঙ্ক বললেন আদালত
৩০ মে ২০২৪ ১৯:০৩ | আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০১:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চাঞ্চল্যকর একটি হত্যা মামলার রায়ে ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এর পর রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত মামলার এমন পরিণতির জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) দায়ী করেছেন।
আদালত বলেছেন, ‘এ ধরনের কর্মকর্তা পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক।’ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর ব্যর্থতার কথাও আদালতের পর্যবেক্ষণে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় দেন।
রায়ে খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন– আজগর আলী (৫২), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮), আবু বক্কর (৫১) ও নেজাম উদ্দিন নাজু (১৭)। এদের মধ্যে নাজু ছাড়া ১১ জন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এম আবু তৈয়ব তালুকদার সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলী ও তার সমর্থকদের সঙ্গে তৈয়বের বিরোধ তৈরি হয়।
২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৈয়বের বড় ভাই ইউসুফ বিদেশে থেকে ফিরলে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০দিন পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে আজগর আলীসহ ১২ জনের নামে থানায় মামলা করেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অশোক কুমার দাশ সারাবাংলাকে জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষে ১৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বুধবার (২৯ মে) যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এর পর রায়ে আদালত ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
পিপি বলেন, ‘মাননীয় আদালত পুলিশের আলামত জব্দ ও তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি উল্লেখ করে সবাইকে খালাস দিয়েছেন। আমরা ১৬ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা সবাই নিহতের পরিবারের। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও তারা সাক্ষী হননি ভয়ে। কেউ আবার দেশের বাইরে চলে গেছেন।’
‘তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি বলব, যারা খালাস পেয়েছেন, তারাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব’- বলেন পিপি অশোক কুমার দাশ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যথেষ্ট গাফেলতি ও পক্ষপাতের পরিচয় দিয়েছেন। যে জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করেছেন, এর সঙ্গে সাক্ষ্যে উনার বক্তব্যের কোনো মিল ছিল না। ঘটনাস্থলে হাজির হওয়া এবং জব্দ তালিকা তৈরির সময়ে গরমিল পাওয়া যায়। আমরা আদালতে সেটা চ্যালেঞ্জ করেছি যে, তিনি একটি বানোয়াট জব্দ তালিকা দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের কাছে আরও প্রতীয়মান হয়েছে যে, তদন্ত কর্মকর্তা বাদীপক্ষের মাধ্যমে বায়াসড হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের সম্পৃক্ততার যথেষ্ঠ তথ্যপ্রমাণ নেই। আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক বলেছেন। বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’
উজ্জ্বল বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য ছাড়া একজনও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যও আদালতের কাছে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এ জন্য আদালত সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।’
রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী শাহিনুর আক্তার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আইনকে অনেক সম্মান করি। কিন্তু আজ ন্যায়বিচার পেলাম না। এরাই (আসামি) আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমাকে বিধবা করেছে। আমার তিন সন্তানকে এতিম করেছে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম