‘আজিজ-বেনজীরের মতো আরও অনেক রূপকথার কাহিনি আছে’
২৮ মে ২০২৪ ১৮:১৮ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ১৯:৫৪
ঢাকা: আজিজ-বেনজীরের মতো আরও অনেক রূপকথার কাহিনি আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘জিয়াউর রহমান অনন্য রাষ্ট্রনায়ক’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা পরিষদ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশ থেকে যে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে লুট হচ্ছে। ব্যাংক শূন্য হচ্ছে, রাজকোষ শূন্য হচ্ছে। আমরা তো শুধু দু’জনের কথা শুনেছি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং পুলিশপ্রধান। তাদের যে রূপকথার কাহিনি শুনছি, এরকম কাহিনি আরও অনেক আছে। যারা সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে, গুম-খুন এবং নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল, তাদের কাহিনি হয়তো আমরা জানি না। আমরা না জানলেও ভুক্তভোগীরা ঠিকই জানে। ঘটানাগুলো তাদের জানা আছে।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদরা যে এতকিছু করেছে, এটা কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না? আওয়ামী লীগ সরকার কি কিছুই জানত না? সরকার বা রাষ্ট্রের যারা গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তারা তো একেবারে প্রধানমন্ত্রীর কব্জায়।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি আমেরিকায় যায়, সেখানে আন্দোলন হলে সেই ছবিগুলো তুলে রাখা হয় এবং পরবর্তীকালে সেই আন্দোলনকারী বাংলাদেশে এলে এয়ারপোর্টেই গ্রেফতার করে। শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়েছিলেন; সেখানে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। সেই ছবিগুলো গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা যখনই বাড়িতে আসে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়েছে গোয়েন্দারা। অনেককে গ্রেফতারও করেছে। বেনজীর আহমেদ ও আজিজ আহমেদের বেলায় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নীরব ছিল কেন? তাদের অপকর্ম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল করেনি কেন?’
তিনি বলেন, ‘তাদের (সরকার) লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে নিপীড়ন করা, ক্ষমতা স্থায়ী করে রাজত্ব কায়েম করা। এ জন্য তারা উদারতাকে পছন্দ করে না। এজন্য তারা জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ, তারেক জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ দেখায়।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নন, সেটি তারা প্রমাণ করছে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য উনার মধ্যে কোনো নীতি নৈতিকতা এবং জনগণের কাছে অঙ্গীকার নেই। উনি জনগণের কাছে অনেক ওয়াদা করেন। কিন্তু সেটি রক্ষা না করারকেই রাজনীতি মনে করেন।’
তিনি বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দেড় লাখ বাড়ি-ঘর তছনছ হয়ে গেছে। ১৬ জন মানুষ মারা গেছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, দৃষ্টি যাতে না যায়, সেজন্য তিনি (শেখ হাসিনা) তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটা বাজে কথা বলেছেন। উনার মনের মধ্যে থাকা প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য উনি ব্যাকুল হয়ে গেছেন। জনগণ জলোচ্ছ্বাসে বাঁচল কী মরল- এটুকু খেয়াল ওনার নাই। ওনার টার্গেট হলো- যেকোনো অবস্থায় জিয়া পরিবারকে আক্রমণ করা।’
রিজভী আরও বলেন, ‘এ সরকার কত যে অপকর্ম করেছে, কত যে নিষ্ঠুরতা করেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। যাকেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছে, তাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন চলছে আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ। বাংলাদেশের গুম-খুনের কাহিনি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও রিপোর্ট করছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। বহু জায়গায় প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ নেই। আমাদের যে মেট্রোরেল করা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ ১০ মিনিট পর পর যায়। উন্নয়ন টেকসই হয়নি। উন্নয়নের নামে যে অনেক টাকা চুরি হয়ে গেছে, এটা এই সরকারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্রনেতা ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম