আজিজ-বেনজীর ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়: কাদের
২৮ মে ২০২৪ ১৭:৪৮
ঢাকা: সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, সরকারের বিচার করার সৎ সাহস আছে। অপরাধ অস্বীকার করে সরকার তাদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারপ্রধান আপসহীন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তার মূলে তার সততা ও পরিশ্রম। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
সরকার পরিবর্তন নিয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার পরিবর্তনের উপায় দুটি-একটা গণঅভ্যুত্থান, আরেকটা নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থান বিএনপি’র গলাবাজিতে ছিল, বাস্তবে ছিল না। গণআন্দোলনও তারা করতে পারেনি।
তিনি বলেন, যে আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত নয়, সে আন্দোলন কখনও সফল হয় না। জনগণ সম্পৃক্ত ছিল না বলেই তাদের আন্দোলন বারে বারে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচন বয়কট করার পরও ভোটার টার্ন আউট ৪২ শতাংশেরও বেশি। তারা বয়কট করে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, জনগণের অংশগ্রহণও ঠেকাতে পারেনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য অপপ্রচার করছে এবং অপরাধীদের ক্ষমা করেছে। তাদের আমলে অপরাধীদের কোনোদিন কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। আজকে তারা বলে তারেক রহমানকে কিভাবে শাস্তি দেবেন?
তিনি বলেন, শাস্তি তো তিনি পেয়ে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় নয় বছর কারাদণ্ড হয়েছে। সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের কিছু টাকা বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে। অর্থ পাচারের মামলায় তারেক রহমানের সাত বছর সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এখন শাস্তির বাস্তবায়নটা করতে হবে। শাস্তি কার্যকরে তাকে দেশে ফিরে আনতে হবে এবং সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তার শাস্তি হতেই হবে।
এই দেশে হত্যা ও গুমের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়েছে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাতে- এমন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে তিন হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মীকে গুম করেছে, খুন করেছে। যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের, সেটা কি বিএনপি ভুলে গেছে? এদেশের মানুষ এখনো সেই হত্যা, গুমের রোমহর্ষক কাহিনী ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, ৬২ হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের; কাদের আমলে কারাগারে ছিল? যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধে কারামুক্তি দিয়েছে জিয়াউর রহমান। এর মধ্যে ৭০৩ জন দণ্ডিত আসামি। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এটা সত্য নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে গুম করে খুন করেছে বিএনপি। এর বিচার কে করেছে? সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যাপারে দুদক তদন্ত করে বের করছে। দুদক স্বাধীন। এই স্বাধীনতা শেখ হাসিনা দুদককে দিয়েছেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে এখনো তদন্ত হচ্ছে এবং আরও তদন্ত হবে।
এ সময় সেতুমন্ত্রী বলেন, তদন্ত হচ্ছে মানে মামলা হলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কোনো অপরাধী শাস্তি ছাড়া পার পাবে না শেখ হাসিনার আমলে। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ যদি অপরাধী হন তার বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে পারবে দুদক। অপরাধী হলে অপরাধের জন্য শাস্তি পেতেই হবে। তিনি যেই হোন।
ফখরুল এবং বিএনপি নেতারা এখন কথায় কথায় সাবেক আইজিপির দুর্নীতির কথা বলে। তাদের আমলে সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা তার বিচার কি করেছে তারা? রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার প্রাণনাশের সঙ্গে জড়িত-এর বিচার কি বিএনপি করেছে? এসপি কহিনুর- যার হাতে কত রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, অন্তঃসত্তা নারী পর্যন্ত রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার নির্যাতন, দুর্নীতির কথা ঢাকা শহরের মানুষের মুখে মুখে। তার বিচার কি হয়েছে? তাদের আমলে যেসব নেতাকর্মী দুর্নীতি করেছে, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি -এসবের বিচার কি তারা করেছে?
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এদেশে ৭৫ পরবর্তীকালে একমাত্র ক্ষমতাসীন রাজনীতিক যিনি অপরাধীকে নিজের দলের লোক হলেও ক্ষমা করেন না। এর প্রমাণ তিনি রেখেছেন। বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীদের কি ছাড় দেওয়া হয়েছে? বিশ্বজিতের কথা সবার জানা আছে।
এ সময় উপকূলীয় এলাকায় বাঁধভাঙা এবং টেকশই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতু মন্ত্রী বলেন, জলোচ্ছ্বাসের মুখে সব জায়গায় বাঁধ টিকে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। ইচ্ছা হলেই কি এটিকে রোখা যায়? জলবায়ু পরিবর্তন এর বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় এবং ঝড়ের গতির মাত্রাও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পটুয়াখালী পরিদর্শনে যাবেন। সময় পেলে খুলনায়ও যেতে পারেন।
সারাবাংলা/এনআর/এনইউ