Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ী ঋণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা: সিপিডি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২৪ ১৭:৩৭ | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ০২:১৩

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে সিপিডির সেমিনার। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা : দেশে ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ী বা মন্দ ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরাসরি খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৫ লাখ ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ৭১৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে পুনঃ তফসিল ঋণসহ খারাপ ঋণ যদি যোগ করা হলে তার পরিমাণ ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে অর্থ ঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলার বিপরীতে অনাদায়ী ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার ঋণ যোগ করলে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানী একটি হোটেলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী শীর্ষক এক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ সব কথা বলেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

সিডিপি‘র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতড়াইয়ের পরও ব্যাংকিং খাতের প্রসার ঘটেছে। আমরা শুধু ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা করি, নন-ব্যাংকিং খাতেরও সমস্যা কম নয়। ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্যের অন্যতম মূল নিয়ামক হচ্ছে খেলাপি ঋণ। সেটির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অনেকখানি ক্ষরণ ঘটেছে। সেই ক্ষরণের কারণে ব্যাংকিং খাত এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। ছবি: সারাবাংলা

তিনি জানান, বাংলাদেশে ব্যাংকিং পারফর্মেন্স বিষয়টি বিদেশিরা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তারা সময় সময় এ বিষয়ে রেটিং করে থাকে। সর্বশেষ বি-১ র‍্যাটিং এর থেকে বিদেশিরা তাদের আউটলুক রেটিং আরও কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংক বাই ব্যাংক হিসাব করে দেখা গেছে ২০১২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ৭১৫ থেকে বেড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা হয়েছে। এর বাইরে অনেক ধরনের দুর্বল বিষয় রয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া প্রতিবেদন অনুসারে, পুনঃতফসিল ঋণসহ খারাপ ঋণ যদি যোগ করা হয় তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। যা বড় অংক। এছাড়াও আরও খারাপ ঋণ রয়েছে। বর্তমানে অর্থ ঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যেখানে অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ যোগ করলে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও বাড়ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের যে আইনি কাঠামো দরকার, সেটা বাংলাদেশে নেই। ঋণ খেলাপের মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তি রয়েছে। যথেষ্ট বিচারক নেই সেখানে।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকের সুশাসন প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আমরা দেখতে পারছি না। বাংলাদেশে ব্যাংকের বাইরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং ডিভিশনের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, সেটি পারছে না।’

প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর সমস্ত তথ্য জনসন্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা প্রকাশ করে না, তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া। আমরা তথ্যের জন্য মিডিয়ার ওপরে নির্ভর করতাম, সেটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তথ্যের অভাবের কারণে ভুল নীতি গৃহীত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থা থেকে যদি টেনে তুলতে হয়ে, তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মানে শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকেলে আবার আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন দেওয়া আছে। তা অর্জন করতে হবে।’

সারাবাংলা/জিএস/একে

অনাদায়ী ঋণ টপ নিউজ মন্দ ঋণ মোস্তাফিজুর রহমান সিপিডি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর