রাইসির মৃত্যুতে কী প্রতিক্রিয়া ইসরাইলে
২৩ মে ২০২৪ ০৮:৩৫ | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ১২:৪৪
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রাণ হারিয়েছেন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়। একই সময়ে তার সঙ্গী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন। রাইসি ও সহযোগীদের হারিয়ে ইরানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইরানের মিত্র দেশগুলোও শোক জানিয়েছে। তবে ইরানের সঙ্গে বিবদমান সম্পর্কে থাকা ইসরায়েলে পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দেশটির নেতা, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা গেছে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া।
রোববার (১৯ মে) আজারবাইজান সীমান্তে দেশটির সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত একটি বাধ উদ্বোধনের পর ফেরার পথে বিধ্বস্ত হয় রাইসি ও তার সঙ্গীদের বহনকারী হেলিকপ্টার। পরদিন সোমবার (২০ মে) হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় এবং রাইসি ও তার সঙ্গীদের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, এ দুর্ঘটনাটি ইসরায়েলে জন্ম দিয়েছে বিভিন্ন ধরনর প্রতিক্রিয়া। দুটি দেশই সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় বৈরিতা চূড়ান্ত রূপ নেওয়ার পথে এগিয়ে যায়। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ হিসেবে গত এপ্রিলে দেশটির ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
চলমান এই সংঘাতের মধ্যেই ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কেউ কেউ ইসরায়েলি সংযোগের সন্দেহও করছেন। তবে এ দুর্ঘটনায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা অস্বীকার করে এসেছে ইসরায়েল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত নয়। তবে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এ দুর্ঘটনার পর টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনের শুরুতেই ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার বিবৃতি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসরাইলের বিরোধী দলের নেতা আভিগদর লিবারম্যান বলেন, রাইসি একজন নিষ্ঠুর ব্যক্তি ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুতে আমরা চোখের জল ফেলব না। তবে তার মৃত্যুতে ইসরাইলের নীতির কোনো পরিবর্তন হওয়ার আশা নেই। কারণ ইরানের নীতি নির্ধারণ করেন সে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রী এভি মাওজ বলেন, ‘এক মাস আগেও ওরা হুমকি দিয়ে বলেছিল, ইসরায়েল আক্রমণ করলে তাদের (ইসরায়েলের) নিস্তার নেই। এখন তারা নিজেরাই ইতিহাসের ধূলিকণায় পরিণত হয়েছে।’ টাইমস অব ইসরায়েলের ওই প্রতিবেদনে আরও অনেকের মন্তব্যেই রাইসির মৃত্যুকে ইসরাইলের জন্য ‘সুসংবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের ব্যাত ইয়াম শহরে এক ধর্মীয় নেতা তার ছাত্রদের ইহুদিদের সাপ্তাহিক প্রার্থনা না করতে বলেছেন। সাধারণত ইহুদিদের কোনো উৎসব বা উদযাপনের সময় এই প্রার্থনা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাইসির মৃত্যু উৎসব সমতুল্য বলেই সেই প্রার্থনা থেকে ছাত্রদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই প্রতিবেদনে রাইসির মৃত্যুতে নাচ-গান করার ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইয়াই নেট নিউজ রাইসির উত্থান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম ‘তেহরানের কসাই’। অন্য একটি প্রতিবেদনে ওয়েবসাইটটির শিরোনাম ছিল ‘ইরানের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তির মৃত্যু’। ওই গণমাধ্যমে এক কলামে লেখা হয়েছে, রাইসির মৃত্যুতে কারও চোখ থেকে সত্যিকারের জল পড়বে না। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় হত্যালীলার কারণে প্রবীণ প্রজন্মের মধ্যে তাকে নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, হিজাবের বিষয়ে রাইসির কঠোর মনোভাবের কারণে নারীরা তাকে ঘৃণা করেন। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডও তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখত। সেই রাইসির মরদেহ তেহরানে নিয়ে গেলে সেখানে কেউই সত্যিকারের চোখের জল ফেলবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রাইসির মৃত্যুতে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে রাইসির মৃত্যু নিয়ে মিম শেয়ার করা হয়েছে। কোনো কোনো পোস্টে লেখা হয়েছে, রাইসির হেলিকপ্টার চালাচ্ছিলেন এলি কপ্টার নামের এক মোসাদ এজেন্ট।
এই মিমের মাধ্যমে এলি কোহেনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যিনি ছিলেন ইসরায়েলি গুপ্তচর। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দেশটির উপ-তিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পথেও ছিলেন। বলা হয়, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের জয়ের পেছনে কোহেনের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ছিল।
ইসরায়েলের ফরাসি ভাষার চ্যানেল আই-২৪ নিউজের সাংবাদিক ড্যানিয়েল হাইকও ‘এলি কপ্টার’ প্রসঙ্গ এনে কৌতুকের ছলে সংবাদ হিসাবে উপস্থাপনা করেছিলেন। তবে কঠোর সমালোচনার মুখে চ্যানেলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়।
এদিকে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে উল্লাস করেছেন ইসরায়েলি নেতারা। হেরিটেজ মন্ত্রী এমিচে এলিয়াহু এক্স-এ (সাবেক টুইটার) ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘চিয়ার্স’। অন্য একটা টুইটে তিনি লিখেছেন, সেই সব উন্মাদ মানুষ যারা গত রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মৃত্যু কামনা করছিল আর ডানপন্থিরা চাইছিল আমরা যেন ইরানের ওই হত্যাকারীর মৃত্যু উদযাপন না করি।
এই প্রতিবেদনে ইসরায়েলের কয়েকজন নেতার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা রাইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ না করার কথা বলেছেন এবং রাইসির পুরানো বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তবে রাইসির মৃত্যু নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
সারাবাংলা/টিআর
ইব্রাহিম রাইসি ইরান-ইসরায়েল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েল ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া টপ নিউজ প্রেসিডেন্ট রাইসি