এমপির মৃতদেহ উদ্ধার: সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের

ঢাকা: কলকাতার নিউ টাউনের একটা ফ্ল্যাট থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (২২ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিক্রিয়া দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কি এখনও এই সরকারের সক্ষমতা দেখেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে? বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের তথাকথিত একজন সংসদ সদস্য বিদেশে যেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন, তার কোনো খবর দিতে তারা পারলেন না। না পারল বাংলাদেশ সরকার, না পারল তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। তাহলে আমরা কী মনে করব? বিদেশের মাটিতে এটাই একমাত্র ঘটনা কি না আমরা জানি না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন সরকারই কারণেই। দেখুন, কত বড় লজ্জার কথা। সাবেক সেনাপ্রধানকে আমেরিকা থেকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

‘এর জন্য দায়ী কে? এর জন্য (স্যাংশন) দায়ী তো এই সরকারই, এই শাসকগোষ্ঠী। তারা সেনাবাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করায় এই ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা আগেই বলেছি, এর জন্য দায়ী এই শাসকগোষ্ঠী, এই সরকার। তারাই তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে। সেজন্য এদের (সরকার) সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নাই। এটাই একমাত্র পথ’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজ অনেকবার বলা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় থেকে, মিডিয়াগুলো থেকে- বিশেষ করে বাইরের মিডিয়া থেকে- এই আজিজের (আজিজ আহমেদ) কথা। কিন্তু সরকার ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয়, এখনও যেটা বলছে যে, এটা নাকি রাজনৈতিক কথা-বার্তা। এভাবে দেশকে, একটা জাতিকে ধবংস করে দেওয়া, তার অনারকে কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেনাবাহিনী হচ্ছে আমাদের একটা সবচেয়ে ভরসার স্থল, একটা প্রতিষ্ঠান। সেই সেনা বাহিনীকে সরকারের কারণে যদি হেয়প্রতিপন্ন করা হয়, সেটা কখনই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম র‌্যাবের যেসব কর্মকর্তার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আসল, তা থেকে তো তারা (সরকার) কোনো শিক্ষা নিল না। তাদের থেকে একজন পুলিশ বাহিনীর আইজি হয়ে গেলেন। এখন বোধ হয় আইজি আছেন। এটার কতটুকু ইমপ্যাক্ট পড়ে এ ব্যাপারে আমার ধারণা নাই।’

‘এজন্য নাই যে, এই ধরনের সরকার গায়ের জোরে দখল করে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, এই বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকে, যারা তাদের ক্ষমতাটাকে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এই বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে। এটা বাংলাদেশের জন্য চরম দুর্ভাগ্য, আনফুরচুনেট শুধু নয়, লজ্জার কথা’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজ এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সূচকে যে অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, দুর্নীতির ব্যাপারে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক। দেশের মাথা নিচু হয়ে আসে।’

উপজেলা নির্বাচন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ইলেকশন (উপজেলা) নিয়ে আমি তো জনগণের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। কেউ লক্ষ্যও করছে না কোথাও ইলেকশন হচ্ছে। মিডিয়া প্রতিদিন এটাকে (উপজেলা নির্বাচন) বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও, প্রিন্টিং মিডিয়াতেও। এছাড়া কোথাও এটা নিয়ে জনগণের কথা-বার্তা নেই, কোনো আলোচনা নেই। কারণ, নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপরই মানুষের আস্থা চলে গেছে। এই সরকার সেটা করেছে, সাকসেসফুলি করেছে। এই জায়গাগুলো আমাদের রিকভার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, কিছু কিছু মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করে না। হয়তো ভয়ে করে না, অথবা বিভিন্ন কারণে করে না। কিন্তু, বিএনপির সমালোচনা করতে একেবারে সিদ্ধহস্ত। খুঁজে খুঁজে বের করছে কোথায় কী আছে, না আছে। জাতির সামনে সেটা কোনো সমস্যা না, জাতির সামনে সমস্যা এই সরকার, এই শাসকগোষ্ঠী। আমাদের গোটা জাতি আজ ধবংস হয়ে যাচ্ছে। গোটা জাতির আত্মা তারা ধবংস করে দিয়েছে, এটাকে বিক্রি করে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল দেশে, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। গোটা জাতির ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ব্যর্থতার কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মানুষ যাবে কোথায়?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিকে তার জীবননাশের উদ্দেশ্যে গাড়িতে হামলা এবং সেগুনবাগিচায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনুকুল ইসলাম শ্রাবণের ওপরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপির মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

টপ নিউজ বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম