শেকৃবি’তে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ
১৮ মে ২০২৪ ১২:৪২
ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনাপত্তিপত্র ছাড়ায় এক অর্থবছরের নিয়োগ অন্য অর্থবছরে প্রদান, নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় যথাযথ সতর্কতা না দিয়ে প্রক্সি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে উপাচার্য একক ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। কর্মচারী নিয়োগে বাছাই বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সম্মতি না নিয়ে এককভাবে অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন। অথচ চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৯ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন পদের জন্য মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হলেও অফিস সহায়ক পদে (২০তম গ্রেড) লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এছাড়াও লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রে শনাক্তকরণের জন্য প্রার্থীর কোনো ছবি ছিল না। শনাক্তকরণের উপায় না থাকায় একজনের পরীক্ষা অন্যজন দেয়ার অভিযোগ এসেছে। পরীক্ষার হলে প্রার্থীদের উপস্থিতির স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। লিখিত পরীক্ষার খাতায় (মূল্যায়নপত্র) হল পরিদর্শকের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার খাতায় কোনো ধরনের কোডিং বা ডিকোডিং ছিল না।
রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অফিস সহায়ক মোট পদপ্রার্থী ছিল ১ হাজার ২৮৪ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৪৯৪ জন এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৫০ জন। গত ২ মে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা জন্য ১৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
লিখিত পরীক্ষায় হল পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক জানান, লিখিত পরীক্ষার উত্তর মূল্যয়নপত্রে কোনো স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। খাতায় প্রার্থী উপস্থিত আছে কিনা নিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রশন নম্বর সম্বলিত পত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। পরবর্তীতে উপাচার্য পরীক্ষা কেন্দ্রে আসলে তাকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক প্রার্থী জানান, পরীক্ষার প্রবেশপত্রে প্রার্থীদের কোনো ছবি ছিল না। হলে অনেকে প্রক্সি দিতে এসেছিল। উত্তরপত্রে কোনো পরিদর্শক স্বাক্ষর করেননি। এছাড়া আমাদের কাছ থেকেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, ‘প্রায় ১৩শ শিক্ষার্থী আবেদন করায় এতজনের ভাইভা নেওয়া সময়সাপেক্ষ বিধায় আমরা লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। এক্ষেত্রে অসদুপায় অবলম্বন করার তথ্য পাইনি। তবে কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলেও ভাইভা বোর্ডে সে উত্তীর্ণ হতে পারবে না। আমার বিপক্ষে আনা কোনো অভিযোগই সত্য নয়।’
অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা স্বচ্ছতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘স্বচ্ছতা তো পরের বিষয় উপাচার্য এককভাবে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন যদি নিয়োগ বোর্ডের সবাই মিলে ওনাকে দায়িত্ব দেয়। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া উনি এটি করতে পারেন না।
অনাপত্তিপত্র ব্যাতিত নিয়োগ প্রক্রিয়াকরণ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। অভিযোগসূত্রে জানা যায় পূনরায় জনবল নিয়োগ নিতে ২০২১ এবং ২০২৩ সালে যথাক্রমে দুইবার পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।
নিয়ম অনুযায়ী এক অর্থ বছরের নিয়োগ পরবর্তী নতুন অর্থ বছরে নিয়োগ দিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ( ইউজিসি) থেকে অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হয়। শেকৃবি প্রশাসন পরবর্তীতে নিয়োগের জন্য সেই অনাপত্তিপত্র নেয়নি।
ইউজিসির সংশ্লিষ্ট বিশ্বস্ত সূত্র অনাপত্তিপত্র বিষয়টি নিশ্চিতে জানান যে, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির থেকে অনাপত্তিপত্র ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে, যা চরম নিয়মের লঙ্ঘন।
শেকৃবি রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, আমরা ইউজিসি কে অবহিত করেছি এবং আমাদের পরবর্তী বাজেট এ তারা নতুন পদ সমূহকে যুক্ত করেছেন। তারা নেগেটিভ রেসপন্স করেনি এবং বাজেটেও সংযুক্ত করেছে, তাই আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তবে অনাপত্তিপত্র বিষয়টি নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
সারাবাংলা/একে