‘সরকার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই’
১৬ মে ২০২৪ ১৭:৪৭ | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ১৮:২১
ঢাকা: সরকার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ আলোচনা সভা আয়োজন করে। ১৯৭৬ সালের এই দিনে মাওলানা ভাসানী রাজশাহী থেকে ফারাক্কা বাঁধ অভিমুখে লং মার্চ করেন।
মির্জা ফখরুর বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কেনো বিকল্প পথ নেই। বাংলাদেশকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যদি ফিরিয়ে আনতে চাই, বাংলাদেশের জনগণকে যদি আমরা রক্ষা করতে চাই, তার যে উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা, তার যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করবার আকাঙ্ক্ষা তা যদি রক্ষা করতে চাই তাহলে আজকে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে একত্র হয়ে এই ভয়াবহ দানব সরকার, মনোস্টার সরকারকে সরাতে হবে। আজকে আমাদের স্বার্থে আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের কেউ করে দিয়ে যাবে না, আমাদের নিজেদের সেটা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (ভারত) সবসময় বাংলাদেশটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে তাদের সকল কার্য্ক্রম পরিচালনা করেছে। শুধু ফারাক্কা বাধ নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবন্টনের ক্ষেত্রে তারা (ভারত) সবসময়ই গড়িমসি করেছে এবং তারা এই সমস্যার সমাধান করেনি, করছে না। দীর্ঘকাল ধরে তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে এই চুক্তি করছি, এই হয়ে যাবে, এখন ভালো অবস্থায় আছে এই করে করে এই সরকার সময় পার করেছে। এই যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে যে, সরকার পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার। তারা কখনোই জনগণের স্বার্থে যে একটা স্ট্যান্ড নেওয়া সেই স্ট্যান্ড নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থ হচ্ছে কারণ তারা (সরকার) তাদের (ভারত) সামনে অত্যন্ত দুর্বল।’
তিনি বলেন, ‘আমি সেজন্য বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষকে তার অধিকার আদায়ের জন্য তাদের নিজেকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হারিয়ে ফেলেছি, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমরা সকল রাজনৈতিক দল সংগ্রাম করছি গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। এজন্য আমাদের অনেকে প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের অনেককে নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে, ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এই ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে তিনদিনে ২৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও নিপীড়ন-নির্যাতন-গ্রেফতার চলছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আজকে এমন একটা সরকার দখলদারিত্ব নিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে তারা তাদের স্বার্থ এবং প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জনগণের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে কী করে, অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলোর সমস্যার সমাধান কী করে হবে? কারণ, তারা তো এখানে দখলদারিত্ব করছে। বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা কোনো নির্বাচন করে না। নির্বাচন করলে তারা জানে যে, তাদের পরাজয় হবে, তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সেই কারণে বিভিন্ন কৌশলে তারা এখানে একটা নির্বাচন দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকছে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম জেএসডির তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের বাবুল বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ